বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ 2024 সম্পূর্ণ গাইড

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

বাংলাদেশের আইনে বাবার সম্পত্তি বন্টন নিয়ে অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে যা পারিবারিক সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে তা নির্ধারণ করে। এই পোস্টে আমরা “বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ” সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তু আলোচনা করবো। সঠিক আইন জানা থাকলে সম্পত্তি বন্টন সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব।

বাবার সম্পত্তি বন্টনের মূল আইন 

বাংলাদেশে বাবার সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া আইন এবং সিভিল আইন উভয়ের প্রভাব রয়েছে। মুসলিম ব্যক্তির ক্ষেত্রে, বাবার সম্পত্তি শরিয়া আইনের অধীনে বন্টিত হয়। অন্য ধর্মের জন্য হিন্দু উত্তরাধিকার আইন এবং অন্যান্য ধর্মীয় আইন প্রযোজ্য।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী, বাবার সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বন্টন করা হয়। এ আইনের মূল ভিত্তি হলো কুরআন এবং হাদিস। শরিয়া অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, এবং অন্যান্য আত্মীয়দের নির্দিষ্ট ভাগ রয়েছে। নিচে এই আইনটির মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো:

১. ছেলেদের অংশ

শরিয়া আইনে, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুণ অংশ পায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বাবার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে থাকে, তবে ছেলেটি মেয়েটির চেয়ে দ্বিগুণ সম্পত্তি পাবে। কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “পুরুষের জন্য দুটি নারীর অংশের সমান।” (সুরা নিসা: ১১)

২. মেয়েদের অংশ

মেয়েরা পিতার সম্পত্তির অর্ধেক পায়, যা ছেলেদের তুলনায় কম। তবে তারা নিজেদের সম্পত্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ অধিকারভুক্ত। কুরআনের নির্দেশনা অনুসারে, মেয়েরা উত্তরাধিকার পেতে বাধ্য, এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা শরিয়া মতে অন্যায়।

৩. স্ত্রীর অংশ

বাবার মৃত্যু হলে, স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পায় যদি সন্তান থাকে, এবং ১/৪ অংশ পায় যদি সন্তান না থাকে। এই সম্পত্তি শুধুমাত্র স্বামীর সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, এবং তিনি তার প্রাপ্য অংশের অধিকারভুক্ত।

৪. পিতামাতার অংশ

বাবার মৃত্যু হলে তার বাবা-মাও উত্তরাধিকারী হিসেবে অংশ পেতে পারেন। শরিয়া মতে, মৃত ব্যক্তির বাবা তার সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবে, এবং একইভাবে মা-ও ১/৬ অংশ পাবে।

৫. ভাই-বোনদের অংশ

যদি বাবার পুত্র বা কন্যা না থাকে, তাহলে ভাই-বোনরা উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পত্তির অংশ পেতে পারে। কুরআন অনুযায়ী, ভাই-বোনের অংশ নির্ধারিত হয় পুত্রসন্তান না থাকার ক্ষেত্রে।

৬. দায়িত্ব ও ঋণ পরিশোধ

মৃত ব্যক্তির ঋণ এবং অন্যান্য দায়িত্বগুলো তার সম্পত্তি থেকে বণ্টনের আগে পরিশোধ করতে হয়। শরিয়া আইনে এই দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে পালন করা উচিত, কেননা এটি পবিত্র ধর্মীয় আদেশের অংশ।

উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়:

  • শরিয়া আইনের অধীনে, সম্পত্তির বণ্টন প্রক্রিয়া কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী কঠোরভাবে পরিচালিত হয়।
  • কেউ নিজে থেকে শরিয়া আইনের বাইরে গিয়ে অন্যভাবে সম্পত্তি ভাগ করতে পারে না।
  • শরিয়া আইন বিশেষভাবে পুরুষ এবং নারীর জন্য পৃথক অংশ নির্ধারণ করে যা ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলে।

এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি যথাযথভাবে বন্টিত হয়, যা পারিবারিক ঐক্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

হিন্দু উত্তরাধিকার  অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

বাংলাদেশে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম ইসলামী শরিয়া আইনের তুলনায় ভিন্ন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রাথমিকভাবে ভারতীয় হিন্দু উত্তরাধিকার আইন থেকে প্রভাবিত, এবং এই আইনের অধীনে, পিতার সম্পত্তি ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বন্টন করা হয়। এখানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের মূল দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি বণ্টনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই আইন মূলত দায়ভাগ মতবাদ (Mitakshara School of Law) অনুসরণ করে, যা হিন্দু সমাজের প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথার ওপর ভিত্তি করে সম্পত্তি বণ্টনের নিয়মগুলো নির্ধারণ করে। এই পদ্ধতিতে সম্পত্তি বণ্টনের নীতি এবং উত্তরাধিকারীদের অধিকার পর্যালোচনা করা হয়, বিশেষত বাবার মৃত্যুর পর। নিচে এই আইন অনুযায়ী সম্পত্তির বণ্টনের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. প্রধান উত্তরাধিকারী: পুত্র ও তার পুরুষ উত্তরাধিকারীরা

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে বাবার মৃত্যুর পর প্রথমে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় পুত্র বা পুত্রদের।

  • পুত্র: বাবার মৃত্যুর পর তার জীবিত পুত্র বা পুত্রগণ প্রথমে সম্পত্তির সম্পূর্ণ অধিকার পায়। পুত্রগণ সমানভাবে সম্পত্তি বণ্টনের দাবিদার হয়। কোনো পুত্র যদি মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে তার উত্তরাধিকার হিসেবে তার ছেলে বা পৌত্র সম্পত্তি পাবে।

  • পৌত্র (পুত্রের পুত্র): পুত্র না থাকলে বাবার সম্পত্তির অধিকারী হয় পৌত্র। অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তির পুত্রের ছেলে (পৌত্র) সম্পত্তির অধিকারী হবে।

  • প্রপৌত্র (পুত্রের পুত্রের পুত্র): যদি পুত্র এবং পৌত্র কেউ না থাকে, তবে সম্পত্তি প্রপৌত্রর অধীনে চলে যায়।

উপরোক্ত নিয়মে পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সম্পত্তির মালিকানা পায়। এদের উপস্থিতিতে অন্যান্য উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পায় না।

২. বিধবা স্ত্রী: জীবনস্বত্ব

বাবার মৃত্যুর পর যদি পুত্র, পৌত্র বা প্রপৌত্র কেউ না থাকে, তবে সম্পত্তির অধিকারী হন মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী।

  • জীবনস্বত্ব: ১৯৩৭ সালের হিন্দু উইডোস রাইটস অ্যাক্ট অনুসারে, মৃত স্বামীর বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্রের সমান জীবনভোগের অধিকার পায়, তবে তা শুধুমাত্র তার জীবদ্দশায়। তিনি সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কাউকে দান করতে পারেন না।

  • বিধবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি আবার মৃত স্বামীর পুরুষ উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসে।

৩. কন্যারা: জীবনস্বত্বের ভিত্তিতে অধিকার

পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র ও বিধবা স্ত্রী না থাকলে বাবার সম্পত্তিতে কন্যারা অধিকারী হয়। তবে তাদের অধিকার সীমিত এবং পুত্রদের উপস্থিতিতে কন্যারা সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পায় না।

  • অবিবাহিত কন্যা: পুত্র না থাকলে এবং বিধবা স্ত্রী না থাকলে অবিবাহিত কন্যা প্রথমে সম্পত্তির অধিকার পায়।

  • বিবাহিত কন্যা: অবিবাহিত কন্যার অনুপস্থিতিতে বিবাহিত কন্যা সম্পত্তির দাবিদার হয়। তবে, বিবাহিত কন্যার জীবদ্দশায় কেবল জীবনস্বত্বের ভিত্তিতে তিনি সম্পত্তি ভোগ করতে পারেন।

  • পুত্রবতী কন্যা: কন্যার পুত্র (দৌহিত্র) থাকলে তিনি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে কন্যার স্বামী বা মেয়ে সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পায় না।

কন্যারা শুধু জীবনকালীন ভোগের অধিকার পায়; তারা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারে না। তাদের মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি আবার বাবার পুরুষ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে চলে যায়।

৪. পিতা ও মাতা: পরবর্তী উত্তরাধিকারী

বাবার মৃত্যুর পর যদি পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বিধবা স্ত্রী এবং কন্যা কেউই না থাকে, তবে সম্পত্তির অধিকার পায় মৃত ব্যক্তির পিতা।

  • পিতা: পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবা স্ত্রী না থাকলে বাবার সম্পত্তির অধিকার তার জীবিত পিতা পাবেন।

  • মাতা: পিতা না থাকলে এবং অন্য কোনো উপরে উল্লেখিত উত্তরাধিকারী না থাকলে সম্পত্তির অধিকার পান মৃত ব্যক্তির মাতা, তবে তিনিও জীবদ্দশায় জীবনভোগের অধিকার পাবেন।

৫. অন্যান্য নিকট আত্মীয়গণ

পিতা বা মাতা কেউ না থাকলে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ক্রমানুসারে নিকট আত্মীয়রা সম্পত্তির দাবিদার হয়।

  • সহোদর ভাই: সহোদর ভাই বাবার সম্পত্তির দাবি করতে পারে যদি ওপরের কোনো উত্তরাধিকারী না থাকে।

  • বৈমাত্রেয় ভাই: সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই সম্পত্তির অধিকারী হয়।

  • ভাইয়ের পুত্র এবং ভাইয়ের পুত্রের পুত্র: যদি কোনো ভাই না থাকে, তবে ভাইয়ের পুত্র বা ভাইয়ের পুত্রের পুত্র সম্পত্তির অধিকার পায়।

  • পিতামহ এবং পিতামহী: সব ভাই বা ভাইয়ের সন্তান না থাকলে সম্পত্তির দাবিদার হন মৃত ব্যক্তির দাদা এবং দাদী।

  • পিতার ভাই: মৃত ব্যক্তির পিতার ভাইও নিকট আত্মীয় হিসেবে সম্পত্তির অধিকারী হতে পারেন।

জীবনস্বত্বের ধারণা

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে “জীবনস্বত্ব” বলতে বোঝায়, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনো নারী—যেমন বিধবা স্ত্রী, কন্যা বা মাতা—জীবদ্দশায় সম্পত্তি ভোগ বা ব্যবহার করতে পারবেন, তবে মালিকানা বা বিক্রয়, হস্তান্তর কিংবা দান করার অধিকার পাবেন না। এটি শুধুমাত্র জীবনের জন্য একটি স্বত্ব, যা ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে পুরুষ উত্তরাধিকারীদের হাতে ফিরে আসে।

জীবনস্বত্বের বৈশিষ্ট্য:

১. কেবল ভোগের অধিকার: জীবনস্বত্বের অধিকারীরা সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন বাড়িতে বসবাস বা জমি থেকে আয় উপার্জন করতে পারেন, তবে তারা তা বিক্রি করতে পারেন না।

২. অস্থায়ী অধিকার: এটি একটি অস্থায়ী অধিকার যা শুধুমাত্র উত্তরাধিকারীর জীবদ্দশায় থাকে। জীবনের পর এ অধিকার শেষ হয়ে যায়, এবং সম্পত্তি আবার মূল উত্তরাধিকার শৃঙ্খলার পুরুষ সদস্যদের কাছে চলে যায়।

৩. সন্তান বা অন্য কাউকে দান করা নিষেধ: জীবনস্বত্বধারী নারী তার সন্তান বা অন্য কাউকে এই সম্পত্তি দান করতে বা লিখে দিতে পারেন না।

৪. পুরুষ উত্তরাধিকারীদের দখলে ফিরে যাওয়া: জীবনস্বত্বধারীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি তার স্বামীর বা পিতার পরিবারের পুরুষ উত্তরাধিকারীদের হাতে পুনরায় ফিরে আসে।

উদাহরণস্বরূপ:

ধরা যাক, একজন হিন্দু স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী তার সম্পত্তিতে জীবনভোগের অধিকার পেলেন। তিনি তার জীবনের শেষ পর্যন্ত এই সম্পত্তিতে বসবাস করতে পারবেন, কিন্তু তা বিক্রি বা দান করতে পারবেন না। তার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি তার স্বামীর পুত্র বা অন্যান্য পুরুষ উত্তরাধিকারীদের হাতে ফিরে যাবে।

জীবনস্বত্বের এই ধারণা হিন্দু ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী নারীর জন্য একটি সুরক্ষা বিধান হিসাবে দেখা হয়, যাতে তিনি জীবনভর আশ্রয় পান, তবে পরিবারের মূল সম্পত্তি তার সন্তানদের বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উত্তরাধিকার রক্ষা করতে পারে।

হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার সীমিত এবং বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষ। এখানে নারীর অধিকার মূলত জীবনভোগের জন্য এবং মালিকানা বা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার সাধারণত নেই। পিতা বা স্বামীর সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার ও সীমাবদ্ধতার বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:

হিন্দু নারীর সম্পত্তির অধিকার

হিন্দু নারীরা বাবার বা স্বামীর সম্পত্তিতে কিছু ক্ষেত্রে অধিকার পেতে পারে, তবে তা কেবল তাদের জীবদ্দশায় ভোগ করার জন্য। সাধারণত “জীবনস্বত্ব” বা ভোগস্বত্বের ভিত্তিতে তারা এই অধিকার পায়।

১. বিধবা স্ত্রী হিসেবে অধিকার:

  • জীবনস্বত্ব: হিন্দু উইডোস রাইটস অ্যাক্ট, ১৯৩৭ অনুসারে, বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্রের সমান ভোগের অধিকার পায়। তিনি জীবদ্দশায় তার স্বামীর সম্পত্তিতে বসবাস করতে পারবেন ও তার আয় ভোগ করতে পারবেন।
  • সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তরের সীমাবদ্ধতা: বিধবা স্ত্রী সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন না। এটি শুধুমাত্র জীবনভোগের অধিকার এবং বিধবা স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি স্বামীর পুরুষ উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে যায়।

২. কন্যা হিসেবে অধিকার:

  • পুত্র না থাকলে অধিকার: হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে যদি পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র না থাকে, তাহলে অবিবাহিত কন্যা প্রথমে এবং পরে বিবাহিত কন্যা সম্পত্তিতে অধিকার পায়।
  • জীবনস্বত্ব: কন্যারা বাবার সম্পত্তিতে জীবনকালীন ভোগের অধিকার পায়। তারা জমি বা সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারেন, তবে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন না।
  • সীমাবদ্ধতা: কন্যার পুত্রসন্তান না থাকলে কন্যা কিছু অধিকার পেতে পারে। তবে, বিধবা কন্যা, বন্ধ্যা কন্যা এবং যে কন্যার পুত্রসন্তান নেই (শুধু কন্যাসন্তান আছে), তিনি বাবার সম্পত্তিতে অধিকার পান না।

৩. মা হিসেবে অধিকার:

  • জীবনস্বত্ব: মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র ও পিতা না থাকলে মা সম্পত্তিতে জীবনকালীন ভোগের অধিকার পেতে পারেন। তবে, পুত্রের উপস্থিতিতে মায়ের কোনো অধিকার থাকে না।
  • সীমাবদ্ধতা: মায়ের জীবনভোগের অধিকার কেবল তার জীবনের জন্য সীমাবদ্ধ এবং তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি মৃত ব্যক্তির পুরুষ উত্তরাধিকারীদের কাছে চলে যায়।

৪. বোন হিসেবে অধিকার:

  • বাধাহীন উত্তরাধিকার: কোনো অবস্থাতেই বোন তার ভাইয়ের সম্পত্তিতে অধিকার পায় না। ভাইয়ের সম্পত্তি তার পুত্র, পৌত্র বা অন্যান্য পুরুষ উত্তরাধিকারীদের মধ্যেই ভাগ হয়ে থাকে। বোনেরা এক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী নয়।

হিন্দু নারীর সম্পত্তি অধিকার সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা:

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকার পুরুষ উত্তরাধিকারীর তুলনায় সীমিত। এই সীমাবদ্ধতা মূলত তিনটি কারণে হতে পারে:

  1. জীবনভোগের অধিকার, কিন্তু বিক্রয়ের অধিকার নেই: নারী উত্তরাধিকারীরা (বিধবা স্ত্রী, কন্যা, মা) জীবনভোগের অধিকার পায়, কিন্তু তাদের মালিকানা অধিকার নেই। এই অধিকার শুধুমাত্র তাদের জীবদ্দশায় থাকে এবং তারা তা বিক্রি, দান বা হস্তান্তর করতে পারেন না।

  2. পুরুষ উত্তরাধিকারীর উপস্থিতিতে নারীর অধিকার বাতিল হয়: কোনো নারীর পিতা বা স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্র থাকলে, সাধারণত কন্যারা বা অন্যান্য নারী সদস্যরা সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পান না। অর্থাৎ, কন্যার অধিকার নির্ভর করে পরিবারের পুরুষ সদস্যের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর।

  3. সীমাবদ্ধ অধিকার, যা উত্তরাধিকারের পূর্ণ স্বত্ব নয়: নারীরা উত্তরাধিকারের পুরো অধিকার পান না; বরং তাদের অধিকার আংশিক ও সীমিত।

এই আইন নারীর জন্য সম্পত্তি ভোগের সুযোগ দিলেও মালিকানা অধিকার দেয় না। নারীর অধিকার শুধুমাত্র ভোগের জন্য সীমাবদ্ধ এবং তার মৃত্যুর পর এ সম্পত্তি আবার মূল উত্তরাধিকারীদের হাতে ফিরে যায়। এটি হিন্দু ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক কাঠামোর কারণে গড়ে ওঠা একটি আইন, যেখানে পুরুষ সদস্যদের হাতে পরিবারের সম্পত্তি ধরে রাখার একটি প্রথাগত লক্ষ্য রয়েছে।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন 

বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য বাবার সম্পত্তি বন্টন আইনের ক্ষেত্রে প্রধানত ব্রিটিশ আমলের আইন অনুসরণ করা হয়, যা ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২ দ্বারা প্রভাবিত। এই আইনের অধীনে বাবার সম্পত্তি ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী এবং অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে বন্টিত হয়। এখানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি বন্টনের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:

উত্তরাধিকারী হিসেবে নারী ও পুরুষ, সম্পূর্ণ রক্ত সম্পর্ক ও অর্ধ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে, এবং মাতৃগর্ভস্থ সন্তানদের মধ্যে যা বণ্টনযোগ্য সম্পত্তি তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

১. নারী ও পুরুষের সমান মর্যাদা:

  • উত্তরাধিকারী হিসেবে, ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী। অর্থাৎ, তারা সমান অংশে সম্পত্তি পাবে। উদাহরণ হিসেবে, যদি আলফ্রেড মৃত্যুর সময় তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে যান, তবে এই পাঁচজনের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাবে বণ্টিত হবে।

২. অর্ধ রক্ত ও পূর্ণ রক্ত সম্পর্কের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই:

  • সৎ (বৈমাত্রেয়) ভাই ও আপন (পূর্ণ) ভাই সমান মর্যাদায় সম্পত্তি পাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি রবিনসন মারা যাওয়ার সময় তার বৈমাত্রেয় ভাই জিম এবং আপন ভাই জয় থাকেন, তবে তারা দুজনই রবিনসনের সম্পত্তি সমানভাবে পাবেন।

৩. নিকটবর্তী আত্মীয় দূরবর্তী আত্মীয়কে প্রতিস্থাপিত করবে:

  • উত্তরাধিকারী হিসেবে, মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী আত্মীয় (যেমন, সহোদর ভাই) যদি জীবিত থাকে, তবে সে দূরবর্তী আত্মীয় (যেমন, চাচাতো বা মামাতো ভাই) কে প্রতিস্থাপন করবে। উদাহরণস্বরূপ, মৃত ব্যক্তির সহোদর ভাই চাচাতো ভাইদের থেকেও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।

৪. মাতৃগর্ভস্থ সন্তান:

  • যদি কোনো খ্রীষ্টান ব্যক্তির মৃত্যুর সময় তার স্ত্রীর গর্ভে একটি সন্তান থাকে এবং সে সন্তান পরবর্তীতে জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তবে সে তার পিতার সম্পত্তির একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, তার অন্য কোনো ভাই বা বোন থাকলে, সে তাদের সঙ্গে সমান অংশে সম্পত্তি ভাগ করবে। (বোস্টালস বনাম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, ১২ ডব্লিউ আর ৫২৩)

 

উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিতরণযোগ্য সম্পত্তি


সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর ৩০ ধারা অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির মূলধন বা অধিকাংশ অংশ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ হয়। তবে, যদি মৃত ব্যক্তি কোনো উইল করে যান, তবে সেই উইলে নির্ধারিত সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না। কিন্তু, যদি উইলটি আইনগত ত্রুটির কারণে অকার্যকর হয়ে যায়, তবে ওই সম্পত্তি আবার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে। সুতরাং, যে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের অধিকার রয়েছে সেগুলো হলো:

  1. উইল করা হয়নি এমন সম্পত্তি।
  2. উইল করা হয়েছিল, তবে ওই উইল আইনগত ত্রুটির কারণে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীরা:

খ্রীস্টান ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তিতে যারা উত্তরাধিকারী হবেন, তারা হচ্ছেন:

  • স্বামী বা স্ত্রী
  • রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়

রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • প্রত্যক্ষ বা সরাসরি রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় (যেমন ছেলে, মেয়ে)।
  • পরোক্ষ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় (যেমন ভাই, বোন, চাচা, মামা, খালা, ফুফু ইত্যাদি)।

১. স্বামী বা স্ত্রী:

  • স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর, একে অপরের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবেন। (ধারা ৩৫, সাকসেশন অ্যাক্ট)

 

তবে, কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে যা লক্ষ্যণীয়:

  • যদি কোনো রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় না থাকে:
    সেক্ষেত্রে, স্ত্রীর সম্পত্তির পুরোটাই স্বামী পাবেন, অথবা স্বামীর সম্পত্তির পুরোটাই স্ত্রী পাবেন।
    উদাহরণ: ডেভিড মারা গেলেন, রেখে গেলেন দুই লাখ টাকার স্থাবর এবং ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি। ডেভিডের স্ত্রী এলেন তার সম্পত্তি পুরোপুরি পাবেন—দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই।
  • যদি সন্তান থাকে:
    স্ত্রী স্বামীর মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ পাবেন এবং সন্তানরা সমানভাবে ২/৩ অংশ ভাগ করে নেবেন।
    উদাহরণ: মার্টিন মারা গেলেন, রেখে গেলেন স্ত্রী জেনি, ছেলে জেমস এবং মেয়ে আইরিন। মার্টিনের মোট ছয় লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। এক্ষেত্রে, স্ত্রী জেনি পাবেন ১/৩ অংশ অর্থাৎ দুই লাখ টাকা, এবং ছেলে জেমস ও মেয়ে আইরিন পাবে ২/৩ অংশ, যা সমানভাবে ভাগ হয়ে প্রতিজন দু’লাখ টাকা করে পাবে।
  • যদি সন্তান না থাকে এবং পরোক্ষ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় থাকে:
    তখন, স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবেন এবং অন্য আত্মীয়-স্বজনরা ১/৩ অংশ সমানভাবে পাবেন।
    উদাহরণ: জন মারা গেলেন, রেখে গেলেন তার স্ত্রী কবিতা এবং বোন জেনিফার। জনের ছয় বিঘা জমি ছিল। এখানে, স্ত্রী কবিতা পাবেন ২/৩ অংশ (৪ বিঘা জমি) এবং বোন জেনিফার পাবেন ১/৩ অংশ (২ বিঘা জমি)।

উল্লেখযোগ্য বিষয়:

  • স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস করলেও:
    আলাদাভাবে বসবাস করলেও, স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন। তবে যদি তারা বিবাহ-বিচ্ছেদ করে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তি গ্রহণের অধিকার হারাবেন।

এই নিয়মাবলী অনুযায়ী, খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করা হয়।

২. সন্তান:

মৃত ব্যক্তির সন্তানরা তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে নিম্নলিখিত নিয়মে অংশ পাবেন:

  • পিতা বা মাতা জীবিত থাকলে সন্তানদের অংশ:
    যদি পিতা মারা যান এবং মাতা জীবিত থাকেন, অথবা মাতা মারা যান এবং পিতা জীবিত থাকেন, তবে সন্তানেরা মৃত পিতা বা মাতার সম্পত্তির ২/৩ অংশ লাভ করবে।
    উদাহরণ: মার্টিনা মারা যাওয়ার সময় তার দুই সন্তান রোজনীন ও রনি এবং স্বামী পিটার জীবিত ছিলেন। মার্টিনার মোট ১২ বিঘা জমি ছিল। এই ক্ষেত্রে, সন্তানেরা ২/৩ অংশ অর্থাৎ ৮ বিঘা জমি পাবে, এবং পিটার ১/৩ অংশ অর্থাৎ ৪ বিঘা জমি পাবেন।

  • সন্তানদের অগ্রাধিকার:
    মৃত ব্যক্তির সন্তান সবসময় তার নানা, নানি, দাদা, দাদি, চাচা, ফুফু প্রভৃতির ওপর অগ্রাধিকার পাবে।
    উদাহরণ: শ্যামল রোজারিও মারা গেলে তার পিতা আব্রাহাম জীবিত ছিলেন। তবে, তার স্ত্রী মার্থা ১/৩ অংশ বা ৩/৯ অংশ এবং সন্তানরা (ডেনিস, টম, জারা) ২/৩ অংশ ভাগ করে নেবেন। সন্তানরা প্রত্যেকে ২/৯ অংশ করে পাবেন।

  • ছেলে ও মেয়ে সমানভাবে সম্পত্তি পাবেন:
    মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে সকলেই সমান অংশে সম্পত্তি পাবেন।
    উদাহরণ: জীবন ডি কস্টারের ৫ সন্তান—জনি, জিমি, ডিক, হ্যারি, এবং ক্যালি। এই ৫ জন সমানভাবে ১/৫ অংশ করে সম্পত্তি পাবেন।

  • মৃত সন্তানের পুত্র-কন্যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন:
    যদি মৃত ব্যক্তির কোনো পুত্র বা কন্যা থাকে এবং তার সন্তান মারা গিয়ে থাকে, তবে সেই মৃত সন্তানের পুত্র-কন্যারা তাদের মৃত পিতা-মাতার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং সম্পত্তি পাবে।
    উদাহরণ: যদি শ্যামল রোজারিওর কোন ছেলে বা মেয়ে মারা গিয়ে থাকে, তবে তার সন্তানেরা মৃত ব্যক্তির অংশ পাবে।

৩. পিতা:

মৃত ব্যক্তির পিতা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন শুধুমাত্র তখনই, যখন মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকে।

  • উদাহরণ: কার্টার মারা গেলেন, রেখে গেলেন স্ত্রী ডেলা এবং পিতা জন। কার্টারের স্ত্রী ডেলা ২/৩ অংশ (৮ বিঘা জমি) পাবেন এবং পিতা জন ১/৩ অংশ (৪ বিঘা জমি) পাবেন।

৪. মাতা:

মৃত ব্যক্তির মাতা সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবেন নিম্নলিখিত শর্তে:

  • মাতা তখনই উত্তরাধিকারী হবেন, যখন সন্তান বা পিতা জীবিত না থাকে।
    সন্তান থাকলে, মা সম্পত্তি পাবেন না। যদি পিতা জীবিত থাকেন, তবে সন্তান না থাকলেও মা কোনো সম্পত্তি পাবেন না। তবে, পিতা ও সন্তান না থাকলে, মা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।

  •  মাতা, ভাই-বোনদের সমান অংশ পাবেন:
    মৃত ব্যক্তির মা, ভাই এবং বোন সমান অংশে সম্পত্তি পাবেন।
    উদাহরণ: যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে, মায়ের কাছে, ভাই-বোনদের কাছে সম্পত্তি না থাকে, তবে মা, ভাই, এবং বোনরা ১/৩ করে সমান অংশে সম্পত্তি পাবেন।

৫. ভাই, বোন এবং ভাই-বোনের সন্তান:

  •  ভাই-বোনের উত্তরাধিকার:
    ভাই-বোন বা তাদের পুত্র-কন্যাদের উত্তরাধিকার কেবল তখনই সৃষ্টি হবে, যখন মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান বা পিতা জীবিত না থাকে।
  •  মৃত ভাই বা বোনের পুত্র-কন্যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন:
    যদি মৃত ব্যক্তির ভাই-বোনের কোনো সন্তান থাকে, তবে তারা তাদের মৃত পিতা-মাতার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং অংশ পাবে।
  •  বৈমাত্রেয় ভাই ও আপন ভাই সমান অংশে উত্তরাধিকারী হবে:
    বৈমাত্রেয় ভাই এবং আপন ভাইরা সমানভাবে উত্তরাধিকারী হবে এবং সমান অংশ পাবে।
  • মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অংশ:
    যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর জীবন থাকেন, তবে স্ত্রীর ২/৩ অংশ এবং ভাই-বোন বা তাদের পুত্র-কন্যাদের মধ্যে বাকি ১/৩ ভাগে ভাগ করা হবে।
  •  ভাই-বোনের পুত্র-কন্যারা প্রতিনিধিত্ব করবেন:
    যদি মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন জীবিত না থাকে, তবে তাদের পুত্র-কন্যারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করে অংশ পাবেন।
    উদাহরণ: যদি জর্জের কোনো ছেলে-মেয়ে না থাকে এবং তার ভাই জিমের তিন ছেলে ক, খ, গ, এবং তার বোন লায়লার দুই মেয়ে প, ফ জীবিত থাকে, তবে সম্পত্তি ৫ ভাগে ভাগ হবে এবং প্রত্যেকে ১/৫ অংশ পাবে।

৬. অন্যান্য উত্তরাধিকারী:

খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনে, মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা, সন্তান, ভাই-বোন এবং তাদের সন্তানদের বাইরে কিছু অন্যান্য আত্মীয়ও উত্তরাধিকারী হতে পারেন, তবে তাদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। এই আত্মীয়রা কেবল তখনই উত্তরাধিকারী হতে পারেন, যখন মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন জীবিত না থাকে। এই আত্মীয়রা হতে পারেন: চাচা, চাচাত ভাই, দাদা, ফুফু, খালা, মামা প্রমুখ।

শর্তাবলী:

  • রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের অগ্রাধিকার:
    মৃত ব্যক্তির রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে যারা মৃত ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থানে থাকবেন, তারা দূরবর্তী আত্মীয়দের প্রতিস্থাপন করবেন।
    উদাহরণস্বরূপ, যদি মৃত ব্যক্তির কোনো চাচা বা মামা থাকেন, তবে তারা কেবল তখনই উত্তরাধিকারী হতে পারবেন যখন মৃত ব্যক্তির সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন জীবিত না থাকবে। তবে, একই ধাপে একাধিক আত্মীয় থাকলে তারা সবাই সমান অংশে সম্পত্তি ভাগ করবেন।

  • স্বামী/স্ত্রী:
    যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকেন, তবে তাদের ১/২ অংশ পাবেন এবং বাকি অর্ধেক অংশ (১/২) রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টিত হবে।
    উদাহরণ: যদি একজন ব্যক্তি মারা যান এবং তার স্ত্রী জীবিত থাকেন, তবে স্ত্রীর ১/২ অংশ পাবে এবং বাকি অংশ চাচা, চাচাত ভাই, দাদা, ফুফু, খালা, মামার মধ্যে সমানভাবে ভাগ হয়ে যাবে, যদি অন্য কোনো নিকট আত্মীয় না থাকে।

  • দত্তক সন্তান:
    খ্রিস্টান আইনে দত্তকের কোনো বিধান নেই। অর্থাৎ, দত্তক সন্তান তার দত্তক পিতা-মাতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার দাবি করতে পারে না। তবে, যদি দত্তক সম্পর্কের কোনো প্রথা বা আইনি বৈধতা পাওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হতে পারে।

  • রাষ্ট্রের কাছে অর্পণ:
    যদি কোনো মৃত ব্যক্তির স্ত্রী/স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্য কোনো রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় না থাকে, তবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের কাছে অর্পিত হবে।
    উদাহরণ: যদি একটি পরিবারে কোনো সন্তান, পিতা-মাতা, বা ভাই-বোন না থাকে এবং রক্ত সম্পর্কের অন্য কোনো আত্মীয়ও না থাকে, তবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের দখলে চলে যাবে।

এভাবে, খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনে, সম্পত্তি ভাগ-বণ্টনের জন্য প্রধানত মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই নির্ধারণ করা হয়, এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ কেবল তখনই হয় যখন কোনো আত্মীয় থাকে না।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

আদালতের মাধ্যমে বাবার সম্পত্তি বন্টন: প্রক্রিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

যদি বাবার সম্পত্তি বন্টন নিয়ে পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় বা সম্পত্তি বণ্টনে কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়, তখন আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টন করতে হয়। আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আইনি প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা আবশ্যক। এখানে আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টনের প্রক্রিয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

১. মামলা দায়ের করা 

যদি পরিবারের সদস্যরা বাবার সম্পত্তি বন্টনে একমত না হন, তাহলে যেকোনো একজন উত্তরাধিকারী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। এটি সাধারণত “বণ্টন মামলা” নামে পরিচিত।

  • মামলা দায়েরের স্থান: সম্পত্তি যেখানেই থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার নিম্ন আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়।
  • দরকারি কাগজপত্র: সম্পত্তির দলিল, উত্তরাধিকারীদের তথ্য, এবং বাবার সম্পত্তির বিবরণ সংক্রান্ত সকল নথি দাখিল করতে হবে।

২. সম্পত্তি মূল্যায়ন 

মামলা দায়েরের পর, আদালত সম্পত্তির সঠিক মূল্যায়ন করে।

  • ম্যাপিং ও সার্ভে: আদালত সম্পত্তির সঠিক অবস্থান, আয়তন, এবং বৈধতা নিশ্চিত করতে সরকারী সার্ভেয়ার দ্বারা সম্পত্তির মানচিত্র প্রস্তুত করতে বলে।
  • মুল্য নির্ধারণ: সম্পত্তির বাজারমূল্য নির্ধারণের জন্য আদালত প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্য নেয়, যাতে সঠিক ভাগ করা যায়।

৩. আইনি জটিলতার সমাধান 

অনেক ক্ষেত্রে সম্পত্তির ওপর একাধিক দাবি, বকেয়া ঋণ, বা অতিরিক্ত মালিকানার প্রশ্ন দেখা দেয়। আদালত এই সমস্ত জটিলতাগুলো সমাধান করার জন্য তদন্ত শুরু করে।

  • ঋণ পরিশোধ: যদি বাবার ঋণ থেকে যায়, তাহলে সম্পত্তি বণ্টনের আগে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
  • বৈধ উত্তরাধিকারীদের সনাক্তকরণ: আদালত সকল উত্তরাধিকারীর সঠিকতা যাচাই করে এবং যারা সম্পত্তির দাবিদার, তাদের অংশ সঠিকভাবে নির্ধারণ করে।

৪. আদালতের রায় ও সম্পত্তি বণ্টন 

সমস্ত তদন্ত এবং প্রমাণ উপস্থাপন শেষে আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়। এই রায় অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

  • রায় কার্যকর করা: আদালতের রায় কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়।
  • আপিলের সুযোগ: যদি কোনো পক্ষ আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট থাকে, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করা যেতে পারে। তবে, আপিল না করলে নিম্ন আদালতের রায়ই চূড়ান্ত ধরা হবে।

৫. পারিবারিক সম্পত্তির বিভাজন 

যদি পরিবারের সদস্যরা আদালতের মাধ্যমে বণ্টনে রাজি থাকে, তাহলে সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করা হয়। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং সহজ হতে পারে।

  • আনুষ্ঠানিক চুক্তি: আদালতের বাইরে বণ্টন করার সময়, পরিবারের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা না ঘটে।

আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টনের সুবিধা ও অসুবিধা 

সুবিধা 

  • আইনি সুরক্ষা: আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টন করলে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়, এবং সকল পক্ষের অধিকার রক্ষা পায়।
  • নিরপেক্ষতা: আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী বণ্টনের রায় দেয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: আদালতের সিদ্ধান্তের পর, ভবিষ্যতে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের সম্ভাবনা কমে যায়।

অসুবিধা 

  • সময়সাপেক্ষ: আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টন প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে, বিশেষ করে যদি মামলাটি জটিল হয়।
  • ব্যয়বহুল: আদালতের খরচ এবং আইনজীবী ফি বাবদ অনেক অর্থ ব্যয় হতে পারে।
  • বিরোধ দীর্ঘায়িত হওয়া: যদি পরিবারের সদস্যরা আপিল করতে থাকে, তাহলে বিরোধের মীমাংসা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।

আদালতের মাধ্যমে সহজে সম্পত্তি বন্টনের টিপস 

  • প্রথমে আলোচনা: মামলা দায়েরের আগে পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
  • সঠিক কাগজপত্র জমা: আদালতে মামলা দায়েরের সময় প্রয়োজনীয় সকল নথি সঠিকভাবে জমা দেওয়া উচিত।
  • অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া: একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী সম্পত্তি বন্টন প্রক্রিয়ায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।

আদালতের মাধ্যমে বাবার সম্পত্তি বন্টন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে, তবে এটি একটি নিরপেক্ষ এবং আইনি সুরক্ষার মাধ্যম। তাই, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে, আইন অনুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

Summary
বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ 2024  সম্পূর্ণ গাইড
Article Name
বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ 2024 সম্পূর্ণ গাইড
Description
বাংলাদেশের আইনে বাবার সম্পত্তি বন্টন নিয়ে অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে যা পারিবারিক সম্পত্তি কিভাবে ভাগ হবে তা নির্ধারণ করে। এই পোস্টে আমরা "বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ" সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তু আলোচনা করবো। সঠিক আইন জানা থাকলে সম্পত্তি বন্টন সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
Author
Publisher Name
RBS Property BD
Publisher Logo

Join The Discussion

2 thoughts on “বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ 2024 সম্পূর্ণ গাইড”

  • Md. Sazzad Hossain

    যদি কোন স্ত্রী মারা যায় এবং স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা বাবার অংশ থেকে মায়ে অংশ বের করতে পারবে? দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা বাবার কাছ থেকে মায়ের ভাগ বের করে নিয়েছে

    Reply
    • SIT

      ইসলামী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা বাবার সম্পত্তি থেকে তাদের মায়ের (প্রথম স্ত্রীর) অংশ দাবি করতে পারে না। বাবার জীবদ্দশায় সম্পত্তি তার নিজের অধিকারেই থাকে। তবে বাবার মৃত্যুর পরে সন্তানেরা তাদের উত্তরাধিকারী অংশপাবে,যা শরিয়াহ্ অনুযায়ী নির্ধারিত।

      Reply

Compare listings

Compare
Search
Price Range From To
Open chat
Hello 👋
Can we help you?