শামলাপুর/শাপলাপুর সমুদ্র সৈকত: কক্সবাজারের নতুন আকর্ষণ

শামলাপুর সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার মানেই সমুদ্র সৈকতের রাজ্য, যা তার দীর্ঘ বালুকাময় উপকূল এবং পর্যটকদের ভিড়ের জন্য বিখ্যাত। আমরা সাধারণত কোলাতলী, লাবনি পয়েন্ট, এবং শুগন্ধা পয়েন্টের মতো জনপ্রিয় স্থানে ভ্রমণ করি। তবে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য কক্সবাজারের বাইরেও কিছু শান্ত, নির্জন ও লোকালয়মুক্ত সৈকত আছে। এর মধ্যে শামলাপুর সমুদ্র সৈকত অন্যতম।

কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ রাস্তা দিয়ে টেকনাফ পর্যন্ত গেলে রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেখতে পাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে ইনানী পেরিয়ে দক্ষিণে গেলে রাস্তার ডান পাশে বা পশ্চিম দিকে যে সমুদ্র সৈকত দেখা যায়, তা হলো শামলাপুর বা শাপলাপুর সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কক্সবাজারের ভীড় আর শামলাপুরের নিরিবিলি পরিবেশ

বর্তমান কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতগুলোতে মানুষের প্রচণ্ড ভীড় লেগেই থাকে। সমুদ্রের পাড়ে বসে প্রকৃতিকে অনুভব করা বা সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে শান্তি খোঁজা কক্সবাজারে এখন প্রায় অসম্ভব। অথচ, মানুষ সমুদ্রের দিকে ছুটে যায় একটু শান্তির খোঁজে, শহরের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে হালকা হওয়ার আশায়। লাল কাঁকড়াদের ছুটোছুটি আর ঝাউবনের মাঝে বসে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া এখন কেবল শাপলাপুর বিচেই সম্ভব। শাপলাপুরের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এ কারণেই।

শামলাপুর: শান্তি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ

শামলাপুর সমুদ্র সৈকত টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পাশে অবস্থিত। এখানে আপনি প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পর্যটকদের ভিড় নেই, শুধুমাত্র মাছ ধরার নৌকা এবং জেলেদের দেখা মিলবে। এই নির্জনতা প্রকৃতির আসল রূপটি উপভোগ করার জন্য আদর্শ স্থান।

প্রকৃতির স্পর্শ

শামলাপুর সমুদ্র সৈকতের চারপাশে হাঁটলে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপ, কাঁকড়া এবং ঝিনুক দেখতে পাবেন। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন সৈকত হওয়ায় সমুদ্রের প্রাণীরা এখানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে। নীল আকাশের বিশাল দিগন্ত এবং সাদা বালির গাদা এই সৈকতের সৌন্দর্যকে আরও মুগ্ধকর করে তোলে। প্রবল বাতাস এবং গর্জন তরঙ্গ এই সৈকতকে এক অপূর্ব রোমাঞ্চে ভরিয়ে দেয়। গোধূলির সোনালি আলো যখন বালিতে পড়ে, পুরো সৈকতটি যেন জলরঙের চিত্রের মতো হয়ে ওঠে।

রঙিন নৌকার সাড়ি এবং জেলেদের কর্মব্যস্ততা

শামলাপুর বিচের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো রঙিন নৌকার সাড়ি। এখানে নৌকা তৈরির কাজও হয়। সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য সামুদ্রিক নৌকা। জেলেদের নৌকা পানিতে নামানোর দৃশ্য এবং তাদের কর্মব্যস্ততাও অত্যন্ত সুন্দর। এই দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধকর।

 

শিলখালী গর্জন বন: প্রকৃতির আরেক সৌন্দর্য

শামলাপুর সৈকতের আসেপাশেই আছে একটি সুন্দর গর্জন বন, শিলখালী গর্জন বন। এই বন ৪-৫ কিলোমিটারের ভিতরে অবস্থিত। বনটি অত্যন্ত সুন্দর এবং সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। সকালে এখানে গেলে লাল কাঁকড়াদের দৌড়াদৌড়ি দেখার সৌভাগ্যও হতে পারে


শামলাপুর বিচ: পুরনো কক্সবাজারের স্মৃতি

আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর আগে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ছিলো বিশাল চওড়া। পাড় থেকে পানি পর্যন্ত যেতে হতো কয়েকশো গজ পেরিয়ে। এখন জোয়ারের সময় ৩০ গজের মধ্যেই পানি চলে আসে। সেই অল্প জায়গাতেই হাজার হাজার ছাতার নিচে হাজার হাজার মানুষ শুয়ে থাকে অথবা হেঁটে বেড়ায়। কিন্তু শামলাপুর বিচের প্রস্থ সেই পুরনো কক্সবাজারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। বিরাট চওড়া সৈকত পরিস্কার চকচকে, যা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।

 


কিভাবে যাবেন

শামলাপুর বিচে যাওয়ার জন্য আপনাকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বা টেকনাফ বাসে করে যেতে হবে অথবা বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন। কক্সবাজার অথবা টেকনাফ থেকে গাড়ি বা সিএনজিতে করে শামলাপুর পৌঁছানো যায়।

প্রকৃতি রক্ষা করুন

শামলাপুরের প্রকৃতি এখনও সুন্দর এবং পরিস্কার আছে। আশা করি, আপনি সেখানে গিয়ে চিপস্, বিস্কুট, সিগারেটের প্যাকেট বা অন্যন্য ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। প্যাকেটগুলো নিজের সাথেই নিয়ে ফিরবেন বা ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।

শামলাপুর সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য। তাই, এই সৌন্দর্যকে সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আশা করা যায়, শামলাপুর বিচ খুব শীঘ্রই কক্সবাজার-টেকনাফের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠবে।

 

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?