বাংলাদেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সম্প্রতি প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা জমি, এপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে ‘বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রশংসা করেছে। রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ: কী ও কেন?
২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার এতে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সুযোগটি পুনরায় রাখা হয়েছে। রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই সুযোগটি দেওয়া একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, কারণ এটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
নৈতিকতা বনাম বাস্তবতা
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করহারের বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ কতটা নৈতিক? ওয়াহিদুজ্জামান নিজেও স্বীকার করেন, ‘নৈতিকতার প্রশ্নে জিনিসটা হয়তো সঠিক নয়।’ তবে তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে সংযুক্ত না হলে সেটা পাচার হয়ে বাইরে চলে যাবে। বরং মন্দের ভালো, অর্থনীতিতে টাকাগুলো যুক্ত হলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।’
ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি: বর্তমান সমস্যা ও সমাধান
বর্তমানে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের জন্য গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় সরকার কর, এআইটি এবং মূল্য সংযোজন কর মিলিয়ে ২২ শতাংশ কর দিতে হয়। করপোরেট কর যোগ করলে নিবন্ধন খরচ ৩০ শতাংশ হয়ে যায়। রিহ্যাব প্রস্তাব করেছে, নিবন্ধন ফি ৭ শতাংশ করা হোক। তাদের মতে, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কম হলে ক্রেতারা জমির সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবে, ফলে অপ্রদর্শিত অর্থের সৃষ্টি কমবে।
পুরোনো বনাম নতুন ফ্ল্যাট: নিবন্ধন ফি
বর্তমানে দেশে নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি একই। রিহ্যাবের মতে, এটি অযৌক্তিক, কারণ যাদের সামর্থ্য কম তারা পুরাতন ফ্ল্যাট কেনার দিকে ঝোঁকে। যদি ৫ বছরের পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় ৪ শতাংশ হারে কমানো হয়, তাহলে একদিকে স্বল্পবিত্তবানদের ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ তৈরি হবে, অন্যদিকে সেকেন্ডারি বাজারও গতিশীল হবে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তাবনা
ওয়াহিদুজ্জামান বিশ্বাস করেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘমেয়াদে করদাতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তিনি প্রস্তাব করেছেন, এই সুযোগ ৫ বছর করে দেওয়া উচিত এবং পরবর্তী বছরগুলোতে অন্যান্য নাগরিকদের মতো কর প্রদান করে এটাকে বৈধতা দেওয়া উচিত।
মধ্যবিত্তদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট কিনতে সহায়তার জন্য রিহ্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এক অংকের সুদের হারে গৃহঋণ প্রদান, আবাসন ব্যবসায়ীদের আয়কর কমানো এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, প্রস্তাবিত বাজেটের এই সিদ্ধান্তগুলি বাংলাদেশের আবাসন খাতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রিহ্যাবের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি যদি কার্যকর হয়, তাহলে এটি ক্রেতাদের জন্য যেমন সুবিধাজনক হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও নতুন গতি সঞ্চার করবে।