রাজউক ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের নতুন বিধিমালা: জনসাধারণের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা

rajuk

২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ভূমি, প্লট, স্পেস ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ) বিধিমালা, ২০২৪’ জারি করেছে। এই নতুন বিধিমালা রাজউকের ভূমি বা আবাসিক প্লট, বাণিজ্যিক প্লট, বাণিজ্যিক স্পেস, শিল্প প্লট, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট এবং ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে বিশদ উল্লেখ করেছে।

এই নতুন বিধিমালা পূর্বের ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ল্যান্ড অ্যালোটমেন্ট) রুলস, ১৯৬৯’ বাতিল করে প্রবর্তিত হয়েছে। এতে রাজউক নির্দিষ্ট প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন আহ্বান করবে এবং এই আহ্বান কমপক্ষে দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং মন্ত্রণালয়ের ও রাজউকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদনকারীর যোগ্যতা

আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। কেউ পূর্বে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমি বা আবাসিক প্লট বরাদ্দ পেয়ে থাকলে তিনি নতুন আবেদন করতে পারবেন না। মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

বরাদ্দ প্রক্রিয়া ও কোটা ব্যবস্থা

ভূমি বা আবাসিক প্লটের সংখ্যা যোগ্য আবেদনকারীর তুলনায় কম হলে উন্মুক্ত লটারি মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিশেষ পেশাজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ করা হবে। যেমন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মচারি, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী প্রমুখ পেশার লোকদের জন্য সংরক্ষিত প্লট থাকবে।

 বরাদ্দের শর্তাবলী

প্লট বরাদ্দের পর বরাদ্দ গ্রহীতাকে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং বরাদ্দ প্রাপ্তির তারিখ থেকে চার বছরের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। নির্মাণে ব্যর্থ হলে প্রতি কাঠার জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

বাণিজ্যিক প্লট, স্পেস এবং ফ্ল্যাট বরাদ্দ

বাণিজ্যিক প্লট বা স্পেস, শিল্প প্লট, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের পদ্ধতি বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য রাজউক উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যম এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন আকারের ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করবে।

কোনো প্রকল্পের মোট ফ্ল্যাটের ১০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের জন্য, ৩ শতাংশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে এবং ৩ শতাংশ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দ করা হবে। বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ৫০ শতাংশ মূল্য কিস্তিতে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ ১৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবে।

বিশেষ বরাদ্দ ও ছাড়পত্র

রাজউক জনস্বার্থে এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের আবাসিক প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে:

  • মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি।
  • সংসদ সদস্য।
  • বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের সরাসরি সদস্য।
  • প্রজাতন্ত্রের কর্মে বা কর্তৃপক্ষের আইন প্রণয়নবিষয়ক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এমন সরকারি কর্মচারী।
  • জনকল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিবর্গ।

বরাদ্দ প্রাপ্তির শর্তাবলী

বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি প্রথম কিস্তির অর্থ যৌক্তিক কারণ ছাড়া যথাসময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে বরাদ্দপত্র বাতিল করা যাবে। আবশ্যিকভাবে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং সর্বোচ্চ চার বছরের মধ্যে বসবাস উপযোগী করে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। কেউ যদি বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যর্থ হন, তবে প্রতি বছর প্রতি কাঠার জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

ফ্ল্যাট বরাদ্দ ও শর্তাবলী

ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজউক কোনো আবাসিক প্রকল্পে অধিক সংখ্যক জনগণের আবাসন ব্যবস্থা করার জন্য উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যম ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এক বা একাধিক এলাকা বা ব্লক আকারে ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করতে পারবে।
কর্তৃপক্ষের আওতাধীন যে কোনো প্রকল্পে নির্মিত ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যার:

  • ১০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
  • ৩ শতাংশ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য।
  • ৩ শতাংশ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য।
  • ২ শতাংশ কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।

ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধের নিয়ম

বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ মূল্য কিস্তিতে পরিশোধের পর অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ মূল্য কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে পরবর্তী ১৫ বছরের কিস্তিতে বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে পারবে। কর্তৃপক্ষ আবাসিক ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণের জন্য এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে।

নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী ব্যবস্থা

নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত এলাকায় বা কর্তৃপক্ষের কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদিত লে-আউট প্ল্যানে চিহ্নিত স্থানে ভবন নির্মাণ করে সাশ্রয়ী ভাড়া বা মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া যাবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজউক নিম্ন আয়ের জনগণের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই নতুন বিধিমালা ঢাকার আবাসন ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ন্যায্য ও সুষ্ঠু ভূমি বরাদ্দ নিশ্চিত হবে এবং ঢাকার সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা আরও সুসংহত হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক একসাথে কাজ করে ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি উন্নত এবং সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকবে।

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?