সোনারগাঁও: ইতিহাসের গন্ধে মোড়ানো বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী

sonargaon সোনারগাঁও

সোনারগাঁও বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান। নারায়ণগঞ্জ জেলার এই উপজেলা প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভাণ্ডার সোনারগাঁও সম্পর্কে জানতে আসুন আরও বিস্তারিতভাবে জানি

সোনারগাঁও: ইতিহাস

সোনারগাঁও বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এটি একসময় বাংলার রাজধানী ছিল এবং মুসলিম সুলতানদের শাসনামলে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। সোনারগাঁও নামের অর্থ হলো “সোনার গ্রাম” এবং এর ইতিহাস প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়।

প্রাচীন যুগ

সোনারগাঁওয়ের ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলে বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলিম শাসকগণ তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাচীনকালে এটি সুবর্ণগ্রাম নামে পরিচিত ছিল এবং এটি বঙ্গের একটি প্রধান শহর ছিল।

মধ্যযুগ

সোনারগাঁওয়ের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মধ্যযুগ। ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ১৪শ শতাব্দীর প্রথম দিকে সোনারগাঁও বাংলার সুলতানী আমলের একটি প্রধান শহর হিসেবে আবির্ভূত হয়। সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ, সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এবং সুলতান জালালুদ্দিন মুহম্মদ শাহ সোনারগাঁও থেকে তাদের শাসন পরিচালনা করতেন।

সুলতানী আমল

সুলতানী আমলে সোনারগাঁও বাংলার রাজধানী ছিল এবং এটি বাণিজ্য, শিল্প, ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এই সময়ে এখানে মুদ্রা তৈরি হতো এবং বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। মুসা খাঁর আমলে সোনারগাঁওয়ে প্রচুর উন্নতি হয় এবং এটি একটি সমৃদ্ধ শহর হিসেবে পরিচিতি পায়।

মোঘল আমল

মোঘল আমলে সোনারগাঁওয়ের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পায়, কারণ মোঘল সম্রাট আকবর বাংলার রাজধানী ঢাকা স্থানান্তরিত করেন। তবুও সোনারগাঁও বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে তার গুরুত্ব বজায় রাখে।

ঔপনিবেশিক আমল

ঔপনিবেশিক আমলে সোনারগাঁও একটি ক্ষুদ্র শহর হিসেবে রয়ে যায়, তবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষিত থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে সোনারগাঁওয়ের অনেক ঐতিহাসিক স্থান পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণের কাজ করা হয়।

আধুনিক যুগ

আধুনিক যুগে সোনারগাঁও বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং সোনারগাঁও মিউজিয়াম রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন ও কারুশিল্প প্রদর্শিত হয়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

  • পানাম সিটি: পানাম সিটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যেখানে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যশৈলীর বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যায়।
  • সোনারগাঁও জাদুঘর: এখানে বাংলার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।
  • বড় সর্দারবাড়ি:বড় সর্দারবাড়ি একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ, যা মোঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত
  • গোয়ালদি শাহী মসজিদ:গোয়ালদি শাহী মসজিদ একটি প্রাচীন মসজিদ, যা ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়

পানাম সিটি, সোনারগাঁও


পানাম সিটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। এটি মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। পানাম সিটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো, এবং এটি একসময় বাংলার মুসলিম সুলতানদের অধীনে ছিল। শহরটি বর্তমানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

স্থাপত্যশৈলী

পানাম সিটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে আপনি পুরানো বাংলার নির্মাণ শৈলীর সাথে সাথে মুঘল ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের সংমিশ্রণ দেখতে পাবেন। শহরের মূল আকর্ষণ হলো পানাম নগর, যেখানে প্রায় ৫২টি পুরানো দালান রয়েছে। এই দালানগুলো ইটের তৈরি এবং সেগুলোর দেয়ালে বিভিন্ন কারুকার্য খোদাই করা আছে। প্রতিটি দালানের নকশা ও স্থাপত্যশৈলী ভিন্ন এবং এতে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

  • পানাম নগর: পানাম নগর পানাম সিটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এখানে প্রায় ৫২টি দালান রয়েছে, যা ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। এই দালানগুলো বাণিজ্যিক ও আবাসিক উভয় ধরনের ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়েছিল। দালানগুলোর নির্মাণশৈলী এবং স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
  • বারদী জমিদার বাড়ি: পানাম সিটির কাছে বারদী গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি প্রাচীন বাংলার জমিদারদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার একটি চমৎকার স্থান। এখানে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়।
  • গোয়ালদী মসজিদ: এই মসজিদটি ১৫ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি মুঘল স্থাপত্যের অন্যতম উদাহরণ। মসজিদটির ভিতরে ও বাইরে সুন্দর কারুকার্য খোদাই করা আছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
  • পানাম ব্রিজ: পানাম সিটির একটি প্রাচীন সেতু, যা শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করেছিল। এই সেতুটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

পানাম সিটি ভ্রমণের পরামর্শ

সঠিক সময়ে ভ্রমণ: সকাল সকাল পানাম সিটিতে পৌঁছানো ভাল, কারণ তখন ভীড় কম থাকে এবং আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে সবকিছু দেখতে পারবেন।

  • পানাম সিটি মিউজিয়াম: পানাম সিটির কাছে অবস্থিত এই জাদুঘরে পুরানো বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। এখানে ভ্রমণ করলে আপনি পানাম সিটির ইতিহাস সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন।
  • ফটোগ্রাফি: পানাম সিটির প্রতিটি স্থাপত্যকর্ম ও দালান অত্যন্ত ফটোজেনিক। তাই ক্যামেরা বা ভাল ক্যামেরা সহ ফোন নিতে ভুলবেন না।
  • পর্যটন গাইড: পানাম সিটির ইতিহাস ও স্থাপত্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে স্থানীয় কোনো পর্যটন গাইডের সহায়তা নিতে পারেন।

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর (Folk Art and Craft Museum) বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর। এটি বাংলাদেশের লোকশিল্প ও কারুশিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সোনারগাঁও এর অন্যতম আকর্ষণ। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকশিল্পের নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন পাঞ্জাবি, শাড়ি, ধুতি, এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক; অলংকার, বাদ্যযন্ত্র, খেলনা, আসবাবপত্রসহ অনেক কিছু। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই জাদুঘর খোলা থাকে এবং প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।

প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই জাদুঘরটি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তাঁর উদ্যোগে এবং পরিচালনায় এই জাদুঘরটি গড়ে ওঠে।

জাদুঘরের সংগ্রহ

জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত প্রচুর লোকশিল্প ও কারুশিল্পের নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সংগ্রহ হলো:

  • পুতুল: বিভিন্ন ধরনের পুতুল, যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে।
  • কাঠের কাজ: বিভিন্ন কাঠের তৈরি সামগ্রী, যেমন খেলনা, গৃহস্থালি পণ্য, এবং অন্যান্য শৈল্পিক কাজ।
  • মাটির কাজ: মাটির তৈরি বিভিন্ন পাত্র, পুতুল, এবং অন্য কারুকাজ।
  • শাড়ি ও টেক্সটাইল: বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি, নকশী কাঁথা, এবং অন্যান্য বস্ত্রশিল্পের নিদর্শন।
  • ধাতুর কাজ: ব্রোঞ্জ, পিতল, এবং অন্যান্য ধাতুর তৈরি শৈল্পিক সামগ্রী।

প্রদর্শনী

জাদুঘরে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কারুশিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন। এছাড়াও, জাদুঘরে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম ও কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

দর্শনার্থীদের জন্য সুবিধা

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। জাদুঘরের চারপাশে মনোরম বাগান এবং জলাশয় রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের জন্য অতিরিক্ত আকর্ষণ।

 

বড় সর্দারবাড়ি

বড় সর্দারবাড়ি সোনারগাঁওয়ের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি সোনারগাঁওয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং স্থাপত্য শৈলীর একটি অসাধারণ নিদর্শন। নিচে বড় সর্দারবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণকাল

বড় সর্দারবাড়ি নির্মিত হয় ১৯০১ সালে জমিদার ঈশান চন্দ্র সাহার দ্বারা। এটি মোঘল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত একটি প্রাসাদ, যার মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নকশা এবং কারুকার্য রয়েছে। বাড়িটির অভ্যন্তরে রয়েছে বড় বড় কক্ষ, খোলা আঙ্গিনা এবং সুদৃশ্য বারান্দা। বাড়ির দেওয়াল এবং ছাদে মুরাল ও কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়, যা প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যের সুন্দর উদাহরণ।

ইতিহাস

বড় সর্দারবাড়ি সোনারগাঁওয়ের জমিদারি ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জমিদার ঈশান চন্দ্র সাহা এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন এবং এটি তার পরিবারের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হত। জমিদারদের সময় এই প্রাসাদটি ছিল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল।

বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে বড় সর্দারবাড়ি সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে স্থানীয় এবং বিদেশী দর্শনার্থীরা আসেন সোনারগাঁওয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে। জাদুঘরটি বড় সর্দারবাড়ির বিভিন্ন কক্ষ এবং প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কারুশিল্প প্রদর্শন করে।

দর্শনার্থীদের আকর্ষণ

বড় সর্দারবাড়ির স্থাপত্যশৈলী, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক মূল্য দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। যারা বাংলার প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক স্থান পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি বিশেষ স্থান। এখানে ঘুরে বেড়িয়ে পুরানো দিনের বাংলার জমিদারি শাসনের সময়ের কথা স্মরণ করা যায়।

sonargaon সোনারগাঁও

বাংলার তাজমহল: প্রেমের স্মারক

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত বাংলার তাজমহল আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত। ২০০৩ সালে নির্মিত এই তাজমহল আহসানউল্লাহ মনি তার স্ত্রী রাজিয়ার স্মরণে তৈরি করেন। এটি দেখতে আগ্রার তাজমহলের চেয়ে ছোট হলেও সৌন্দর্যে কোনো অংশে কম নয়। এখানকার প্রবেশ ফি ১৫০ টাকা।

sonargaon সোনারগাঁও


জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর: চিত্রশিল্পীর স্মৃতি

বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের স্মরণে নির্মিত এই জাদুঘরটি সোনারগাঁওয়ের আরেকটি বিশেষ স্থান। এখানে তার আঁকা ছবি, ভাস্কর্য, লেখালেখি এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। এটি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং প্রবেশ ফি ৫০ টাকা

বারদী: ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম

বারদী গ্রাম ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল। এখানে আপনি দেখতে পাবেন ঈশা খাঁর রাজবাড়ী, সোনালি মসজিদ এবং লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম। এই গ্রামটি তার ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং প্রাচীন স্মৃতির জন্য বিখ্যাত।

কদমরসুল দরগাহ

কদমরসুল দরগাহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থান। এই দরগাহটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এখানে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর পায়ের ছাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। দরগাহটি তার স্থাপত্যশৈলীর জন্যও বিখ্যাত। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান জিয়ারত করতে আসেন। মাজারটি সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকে এবং সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। প্রবেশের জন্য কোন ফি দিতে হয় না।

পাঁচ পীরের মাজার: ধর্মীয় তীর্থস্থান
ভাগলপুর গ্রামে অবস্থিত পাঁচ পীরের মাজার একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থান। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ জিয়ারত করতে আসেন।


কিভাবে যাবেন

সোনারগাঁও পৌঁছানোর জন্য ঢাকার গুলিস্তান থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। এসি বাসের জন্য বোরাক ভাল অপশন, ভাড়া জন প্রতি ৫৫ টাকা। নন এসি বাসের ক্ষেত্রে স্বদেশ এবং দোয়েল সার্ভিস ভাল। ভাড়া জন প্রতি ৪০ টাকা। মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে রিকশা নিয়ে সোনারগাঁওয়ের যে কোনো দর্শনীয় স্থানে পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়াও প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস নিয়ে সরাসরি যেতে পারেন।

কিছু পরামর্শ

  • ঢাকা থেকে সোনারগাঁও অনেকটাই কাছে, তাই বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
  • সোনারগাঁও এর ভিতরে খাবারের জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই, তাই খাবার সাথে নিয়ে গেলে ভাল হবে।
  • ঢাকার আশপাশ থেকে গেলে সকাল সকাল চলে গেলে সারাদিন সময় নিয়ে সবকিছু ঘুরে দেখতে পারবেন।
  • ক্যামেরা বা ভাল ক্যামেরা সহ ফোন নিতে ভুলবেন না, কারন সোনারগাঁও এর ভিতরে ছবি তোলার জন্য ভাল জায়গা রয়েছে।
  • ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন এবং ট্যুরিস্ট স্পট গুলোর স্টাফদের সাথে ভদ্র আচরণ করবেন।

উপসংহার


সোনারগাঁও একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ স্থান। এই স্থানটিতে ঘুরে দেখলে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য পেয়ে যাবেন। সোনারগাঁওয়ের দর্শনীয় স্থানগুলো যেমন পানাম নগর, বাংলার তাজমহল, লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, বারদী এবং আরও অনেক কিছু আপনার ভ্রমণকে আরো রোমাঞ্চকর ও স্মরণীয় করে তুলবে। সুতরাং আপনার আগামী ছুটির দিনগুলিতে সোনারগাঁওকে ভ্রমণের তালিকায় রাখুন।

সোনারগাঁওয়ে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন:

  • বড় সর্দারবাড়ি
  • পানাম সিটি
  • সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর
  • গোয়ালদি মসজিদ

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর বাংলাদেশের লোকশিল্প ও কারুশিল্পের নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, পোশাক, গৃহস্থালী সামগ্রী এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপকরণ প্রদর্শিত হয়।

 

সোনারগাঁও পৌঁছানোর জন্য ঢাকা থেকে বাস, ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করা যায়। ঢাকা থেকে সোনারগাঁও প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং যাতায়াতের সময় প্রায় ১ থেকে ১.৫ ঘন্টা লাগে।

সোনারগাঁওয়ের আশেপাশে কিছু হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে যেখানে পর্যটকরা থাকতে পারেন। এছাড়াও ঢাকা শহরে বিভিন্ন হোটেল এবং রিসোর্ট পাওয়া যায় যেগুলো সোনারগাঁও থেকে সহজে যাতায়াতযোগ্য।

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?