বর্তমান বিশ্বে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে নজর কাড়ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস, আধুনিক বিনিয়োগ নীতি ও অবকাঠামোর উন্নতির মাধ্যমে এই দেশগুলো আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বিশেষ অবস্থান করে নিয়েছে। ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান ও আপডেটেড তথ্যের ভিত্তিতে, নিচে শীর্ষ ১০ মুসলিম ধনী দেশের বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হলো।
১. কাতার
মাথাপিছু আয়: ১,১৩,৬৭৫ মার্কিন ডলার
কাতার, মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট রাষ্ট্র হলেও তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের কারণে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে বিবেচিত। উন্নত পরিকাঠামো, বিনিয়োগ বন্ধন এবং বৈদেশিক নীতি কাতারের অর্থনীতিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
২. সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
মাথাপিছু আয়: ৭৮,২৫৫ মার্কিন ডলার
ইউএই একটি ফেডারেশন হিসেবে সাতটি ইমিরেট নিয়ে গঠিত। দেশের অর্থনীতি মূলত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির উপর নির্ভরশীল হলেও, পর্যটন, বাণিজ্য ও আর্ন্তজাতিক বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক নগরায়ন ও ব্যবসায়িক অবকাঠামো ইউএইকে একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে প্রতিপন্ন করেছে।
৩. ব্রুনাই
মাথাপিছু আয়: ৭৪,৯৫৫ মার্কিন ডলার
বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত ব্রুনাই একটি ছোট কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি উন্নত হয়েছে। ব্রুনাইয়ের উচ্চ জীবনের মান ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেশটিকে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় বিশেষ করে তুলেছে।
৪. সৌদি আরব
মাথাপিছু আয়: ৬৭,০০০ মার্কিন ডলার
সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম আরব রাষ্ট্র এবং ইসলামের হিজরতের মূল দেশ। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সৌদি আরব অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেছে, যা দেশটির আয়ের উৎসকে বহুমুখী করেছে।
৫. কুয়েত
মাথাপিছু আয়: ৫১,৫২৮ মার্কিন ডলার
কুয়েত, একটি ছোট কিন্তু তেল সমৃদ্ধ আরব রাষ্ট্র, প্রধানত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি থেকে অর্জিত রাজস্বের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। দেশটির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ নীতি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কুয়েতকে ধনী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম করে তুলেছে।
৬. ওমান
মাথাপিছু আয়: ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার
ওমান মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর অন্যতম, যা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওমান অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে জোর দিয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎকে আরও স্থিতিশীল করছে।
৭. মালয়েশিয়া
মাথাপিছু আয়: ১১,০০০ মার্কিন ডলার
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম প্রধান দেশ মালয়েশিয়া, যার অর্থনীতি কৃষি, তেল ও গ্যাস, এবং বিশেষ করে পাম তেল রপ্তানির মাধ্যমে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। আধুনিক অবকাঠামো ও শিল্পায়নের ফলে মালয়েশিয়া আজ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
৮. বাহরাইন
মাথাপিছু আয়: ২৫,০০০ মার্কিন ডলার
মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইনও তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশের বিনিয়োগ বানিজ্যিক নীতি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও পর্যটন শিল্প বাহরাইনকে একটি উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে।
৯. লিবিয়া
মাথাপিছু আয়: ৮,০০০ মার্কিন ডলার
উত্তর আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ লিবিয়া তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে লিবিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও মজবুত করতে সহায়তা করবে।
১০. মরক্কো
মাথাপিছু আয়: ৩,০০০ মার্কিন ডলার
উত্তর আফ্রিকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র মরক্কো। কৃষি, খনিজ সম্পদ ও পর্যটন খাতের মাধ্যমে দেশটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করছে। মরক্কোর বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কাঠামো এবং উন্নয়নমূলক নীতিমালা আগামী দিনে আরও উন্নতি আনার সম্ভাবনা রাখে।
২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মুসলিম দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বৈচিত্র্য স্পষ্ট। কাতার থেকে শুরু করে মরক্কো পর্যন্ত প্রতিটি দেশের নিজস্ব শক্তি ও উন্নয়নের কৌশল রয়েছে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা হোক বা আর্থিক ও বিনিয়োগ নীতি, এই দেশগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নিজেদের একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও বৈচিত্র্য দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে, যা আগামী দিনে আরও উন্নতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।