জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার হিসাব -বিস্তারিত গাইড

জমির পরিমাপ শতাংশ

বাংলাদেশে জমির পরিমাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটি শতক, কাঠা, বিঘা, একর ইত্যাদি বিভিন্ন এককে করা হয়ে থাকে। এই পোস্টে, আমরা জমির পরিমাপ শতাংশ হিসাবের সম্পূর্ণ বিবরণ, বিভিন্ন এককের সম্পর্ক, এবং হিসাবের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাপ পদ্ধতিগুলি আলোচনা করব।

বাংলাদেশে জমির পরিমাপ এর বিভিন্ন একক

আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। অঞ্চলভেদে এই পরিমাপ পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার হয়, তবে সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর এবং শতক পদ্ধতিতে করা হয়, যা সারাদেশে সমান। এই আঞ্চলিক পরিমাপ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।এখানে ভূমির পরিমাপের কিছু প্রচলিত পদ্ধতি এবং এককের আলোচনা করা হলো:

১. একর (Acre):

একর হলো ভূমির পরিমাপের একটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত একক, যা বিশেষত বৃহত্তর জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে একর একটি সাধারণ পরিমাপ হিসেবে গৃহীত। এটি কৃষি জমি বা বড় আকারের ভূমি পরিমাপের জন্য জনপ্রিয়।

একর এর পরিমাপ:

  • ১ একর = ১০ বর্গচেইন = (৬৬*৬৬০) = ৪৩৫৬০ বর্গফুট
  • ১ একর = ১০০ শতক = ৪৩৫৬৯ বর্গফুট
  • ১ একর = ১০০ শতক = ১০০০০০ বর্গলিংক
  • ১ একর = ১৯৩৬০ বর্গহাত
  • ১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ
  • ১ একর = ৪০৪৭ বর্গ মিটার = ০.৬৮০ হেক্টর
  • ৬৪০ একর = ১ বর্গমাইল
  • ১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
  • ১ একর = ৬০.৫ কাঠা
  • ১ একর = ২ কানি ১০ গন্ডা ( ৪০ শতক কানি অনুসারে)
    ২৪৭ একর = ১ বর্গকিলোমিটার

ব্যবহার:

  • একর সাধারণত বড় জমি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষত কৃষি জমি, খামার, বা বড় আউটডোর প্রকল্পের জন্য।
  • এটি বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় এবং কিছু শহরের বাইরের ভূমি পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।

কাঠা (Katha) :

কাঠা একটি আঞ্চলিক ভূমি পরিমাপের একক, যা বাংলাদেশ, বিশেষত শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় ব্যবহৃত হয়। কাঠা সাধারণত ছোট বা মাঝারি আকারের জমি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এর পরিমাপ অঞ্চলভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

  • ১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট = ৮০ বর্গগজ
  • ১ কাঠা = ৬৬.৮৯ বর্গমিটার
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ
  • ১ কাঠা = ১৬ ছটাক
  • ১ কাঠা = ৩২০ বর্গহাত
  • ২০ কাঠা = ১ বিঘা
  • ৬০ কাঠা = ১ একর

২.কানি (Kani):

কানি একটি আঞ্চলিক ভূমি পরিমাপের একক, যা বাংলাদেশে বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণের হতে পারে, তবে সাধারণত এটি ছোট বা মাঝারি আকারের জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। কানি পরিমাপের এককটি সাধারণত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল এবং কিছু পূর্বাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়।

কানি এর পরিমাপ:

  • ১ কাচ্চা কানি = ৪০ শতক (বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে)।
  • ১ সাই কানি = ১২০ শতক অথবা ১৬০ শতক (আঞ্চলিক ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে)।

চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য নিন্মের হিসাবটা একটু বেশী কাজে লাগবে।

  • ১ গন্ডা = ৮৭১ বর্গফুট।
  • ১ গন্ডা = ২ শতাংশ।
  • ১ গন্ডা = ১.২১ কাঠা।
  • ২০ গন্ডা = ১ কানি ।
  • ১ কানি = ১৬,৯৯০ বর্গফুট।
  • ১ কানি = ৩৯ শতাংশ।
  • ১ কানি = ২৩.৫ কাঠা।
  • ১ কানি = ২০ গন্ডা।

প্রকারভেদ:

  • কাচ্চা কানি: এটি সাধারণত ৪০ শতক জমি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং একে “৪০ শতকের কানি” বলা হয়। এই পরিমাপটি বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকায় ব্যবহৃত হয়, যেখানে জমির পরিমাণ সাধারণত বেশি থাকে।

  • সাই কানি: এটি কোথাও ১২০ শতক পরিমাপ হিসেবে গণ্য হয়, আবার কিছু অঞ্চলে এটি ১৬০ শতক পরিমাপ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। সাই কানি সাধারণত বৃহত্তর জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার:

  • কানি প্রধানত কৃষি জমি এবং বড় আকারের জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষত বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায়।
  • এটি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন মানের হতে পারে, কিন্তু সাধারণত এটি ভূমির পরিমাণ নির্ধারণে সহায়ক।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহার:

  • কানি একটি আঞ্চলিক পরিমাপ, যা বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটি পরিচিত নয়, এবং ভূমি পরিমাপের জন্য অন্য একক ব্যবহৃত হয়।

৩.চেইন (Chain):

চেইন একটি ঐতিহ্যবাহী ভূমি পরিমাপের যন্ত্র, যা মূলত ভূমি জরিপ (surveying) কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইংরেজি পরিমাপ ব্যবস্থা অনুসারে ভূমির দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত গান্টার শিকল নামে পরিচিত। চেইন বা শিকল ভূমির পরিমাপের সঠিকতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং এর মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত।

চেইন এর পরিমাপ:

  • ১ চেইন = ২০.১ মিটার (প্রায় ৬৬ ফুট)
  • ১ চেইন = ১০০ লিঙ্ক (গান্টার শিকল অনুসারে)

ব্যবহার:

  • চেইন মূলত বড় জমির পরিমাপ, ভূমি জরিপ, এবং ভূমির আয়তন নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ভূমি পরিমাপের ক্ষেত্রে চেইন ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি সোজা রেখায় পরিমাপ করা সহজ এবং দ্রুত।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহার:

  • চেইন সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলিতে ভূমি জরিপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি আন্তর্জাতিক পরিমাপের একটি মানক সরঞ্জাম।

৪.ফিতা (Tape):

ফিতা একটি নমনীয় পরিমাপের যন্ত্র, যা সাধারণত ছোট বা মাঝারি আকারের জমি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি যেকোনো নমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হতে পারে, যেমন কাপড়, ধাতু বা প্লাস্টিক, এবং এর মাধ্যমে দূরত্ব, দৈর্ঘ্য বা আয়তন পরিমাপ করা যায়। ফিতা মূলত ফ্লেক্সিবল এবং প্রতিস্থাপনযোগ্য হওয়ায় এটি অনেক ধরনের ভূমি পরিমাপের কাজের জন্য উপযোগী।

ফিতা এর পরিমাপ:

  • ফিতা সাধারণত মিটার বা ফুটে পরিমাপ করে।
  • ১ ফিতা = ১০ মিটার / ১৫ মিটার / ৩০ মিটার (পরিমাপের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হতে পারে, ফিতা অনুযায়ী)

ব্যবহার:

  • ফিতা সাধারণত ছোট এবং মধ্যম আকারের জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে বড় পরিমাপের জন্য চেইন বা গান্টার শিকল ব্যবহার করা হয়।
  • এটি স্থিতিস্থাপক এবং নমনীয় হওয়ায় উঁচু, নিচু বা বাঁকা জমির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়।
  • অফিসিয়াল ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে ফিতা সাধারণত সঠিক মাপ বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহার:

  • ফিতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষত যেখানে ছোট জমি বা নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন।

৫.গান্টার শিকল (Gunter’s Chain):

গান্টার শিকল একটি ভূমি পরিমাপের যন্ত্র, যা ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টার ১৬২০ সালে আবিষ্কার করেছিলেন। এটি মূলত ভূমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং ভূমি জরিপ (surveying) কাজের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী সরঞ্জাম। গান্টার শিকল তার আবিষ্কারের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

গান্টার শিকল এর পরিমাপ:

  • গান্টার শিকল = ২০.৩১ মিটার (প্রায় ৬৬ ফুট)
  • গান্টার শিকল = ১০০ লিঙ্ক (একটি গান্টার শিকলকে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয়, এবং প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বলা হয়)
  • ১ লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি (প্রায় ২০.১ সেন্টিমিটার)

গান্টার শিকল এর ব্যবহারের উদ্দেশ্য:

  • গান্টার শিকল মূলত ভূমির পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং একে বিভিন্ন জায়গায় জমির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • এটি প্রধানত জমির আয়তন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং একে একরে, শতকে, বা অন্যান্য ভূমির পরিমাপের সাথে সম্পর্কিত হিসাব করা হয়।

গান্টার শিকল এর বিভাজন:

  • ১০ লিঙ্ক পর পর নস (ফুলি) স্থাপন করা হয় (৭.৯২ ইঞ্চি পর পর)।
  • ২০ লিঙ্ক পর পর (১৫৮.৪ ইঞ্চি) এবং ৩০ লিঙ্ক পর পর (২৩৭.৩ ইঞ্চি) স্থাপিত হয়।
  • ৫০ লিঙ্ক পর পর (৩৯৬.০ ইঞ্চি) স্থাপন করা হয় এবং ৮০ লিঙ্ক বা ১৭৬০ গজ পর স্থাপিত হয় মাইলস্টোন।

গান্টার শিকলের প্রকারভেদ:

  • গান্টার শিকল ভূমির পরিমাপের একটি ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র, এবং এটি একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য অনুসারে ভূমি জরিপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • এটি ভূমির পরিমাপের জন্য ইস্পাত বা ধাতু দিয়ে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে তা ভূমি জরিপের জন্য একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহার:

  • গান্টার শিকল মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের মতো দেশেও ভূমির পরিমাপের জন্য জনপ্রিয়।
  • গান্টার শিকল দ্বারা ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সহজ এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায়, বিশেষ করে বড় জমি বা কৃষিজমির পরিমাপে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
জমির পরিমাপ শতাংশ

জমির পরিমাপ কতিপয়  প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা

ভূমি: জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২(১৬) ধারা অনুসারেভূমি বলতে চাষ করা হয়, চাষ করা হয় না অথবা বছরের কোনো সময় জলমগ্ন থাকে এরূপ জমি এবং উহা হতে উৎপন্ন লাভকে বুঝায়। বাড়ি ঘর, দালান-কোঠা, মাটির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য জিনিস বা মাটির সঙ্গে সংযুক্ত কোনো জিনিসের সঙ্গে স্থায়ীভাবে আটকানো কোনো জিনিস ভূমির অন্তগত।

ভূমি জরিপ: জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০, সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট (এস.এস.) ম্যানুয়াল-১৯৩৫, সার্ভে এক্ট ১৮৭৫, প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫, এবং অপরাপর জরিপ আইনের বিধান মতে মৌজা ভিত্তিক ভূমির রেকর্ড তথা খতিয়ান ও নকসা প্রস্তুতের কার্যক্রমকে ভূমি জরিপ বলা হয়।

নকশা: নকশা হলো কোনো মৌজা ভুক্ত ভূমির বাস্তব চিত্র বা ভূ-চিত্র।

মৌজা: মৌজা হলো জরিপের একটি ভৌগোলিক ইউনিট। একটি ইউনিয়নকে কয়েকটি মৌজায় বিভক্ত করে এ ভৌগলিক ইউনিট করা হয়।

জে. এল. নং: উপজেলার অন্তর্গত মৌজা সমূহের পরিচিতমূলক ক্রমিক নম্বরকে জে. এল. নং বা জুরিসডিকশন লিস্ট স্বরকে তে নম্বর বলে। মৌজার উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে শুরু করে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে গিয়ে এ নম্বর দেয়া শেষ করা হয়

মৌজা: মৌজা হলো জরিপের একটি ভৌগোলিক ইউনিট। একটি ইউনিয়নকে কয়েকটি মৌজায় বিভক্ত করে এ ভৌগলিক ইউনিট করা হয়।

খতিয়ান: খতিয়ান হলো দখল স্বত্বের প্রামাণ্য দলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। প্রতি খতিয়ানের একটি পৃথক পরিচিতি নম্বর থাকে। খতিয়ানকে “রেকর্ড অব রাইটস” বা “স্বত্বলিপি” বলা হয়। খতিয়ান হচ্ছে নিখুঁত মালিকানা স্বত্ব ও দখলী স্বত্বের প্রমাণ্য দলিল। খতিয়ানে তৌজী নম্বর, জে. এল. নম্বর, স্বত্বের বিবরণ, মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমা (উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেণী দখলকারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা, হিস্যা মতে পরিমাণ লেখা থাকে। উপযুক্ত আদালত কর্তৃক ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত খতিয়ান নির্ভুল হিসাবে গণ্য হতে থাকে।

দাগ নম্বর: একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত ভূমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে বলে দাগ নম্বর।

বাটা দাগ: নকশায় ভুল বসত কোনো প্লট এর দাগ নম্বর বাদ পড়লে, শেষ প্লট নম্বরটির পরের নম্বরটি নিচে লিখে এবং বাদ পড়া প্লটের নম্বরটি উপরে লিখে (ভগ্নাংশের ন্যায়) প্রাপ্ত যে নম্বর পাওয়া যায় তা দিয়ে বাদ পড়া প্লটটি চিহ্নিত করা হয় তাকে বাটা দাগ বলে।

ছুট দাগ: নকশায় দাগ নম্বর বসানোর সময় ভুল বসতঃ কোনো একটি অংক/সংখ্যা বাদ পড়লে অর্থাৎ ছুটে গেলে তাকে ছুট দাগ বলে। যেমন ১, ২, ৩ বসানোর পর ৫ ও ৬ বসিয়ে ফেলা এখানে ৪ ছুট দাগ। অর্থাৎ ঐ নকশায় ৪ নম্বর নামে কোন প্লটের অস্তিত্ব নেই।

পর্চা: জরিপ চলাকালীন সময়ে বুঝারত স্তরে ভূমি মালিককে প্রস্তুতকৃত খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি দেয়া হয় তাকে পর্চা বলে। পর্চা জরিপ কর্মচারী কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত হওয়া উচিত।

হোল্ডিং: একটি খতিয়ানে একটি দাগ থাকতে পারে আবার একাধিক দাগও থাকতে পারে। এরূপ একটি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ভূমিকে হোল্ডিং বা জোত-জমা বলে। হোল্ডিং এর পরিচিত নম্বরকে হোল্ডিং নম্বর বলে।

দাখিলা: ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বিপরীতে প্রদত্ত রসিদকে বলে দাখিলা বা আর. আর. (রেন্ট রিসীট) দাখিলা ভূমি মালিকানা প্রমাণের প্রাথমিক দলিল।

ডি.সি.আর: ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারী পাওনা আদায়ের জন্য যে রসিদ দেয়া হয় তাকে ডি. সি. আর (ডুপিকেট কার্বন রিসীট) বলে।

কবুলিয়ত (Lease Deed): কবুলিয়ত হচ্ছে এক ধরনের শর্তযুক্ত চুক্তিনামা। যা রায়ত কর্তৃক সরকার (পূর্বে জমিদারকে দিত) বরাবরে দেয়া হয়।

জরিপকালে ব্যবহৃত কালি/(রং) এর বিবরণ:

  •  খানাপুরী স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি
  •  বুঝারত স্তরে ব্যবহার করতে হবে সবুজ কালি
  •  তসদিক স্তরে ব্যবহার করতে হবে লাল কালি
  • আপত্তি স্তরে ব্যবহার করতে হবে বু-কোবাল্ট কালি
  • আপিল স্তরে ব্যবহার করতে হবে কালো কালি

ফিল্ড বুক: জরিপের প্রয়োজনে কিস্তোয়ার কালে অফসেট গ্রহণসহ চলমান চেইনের রিডিং লিখনের জন্য যে বই ব্যবহৃত হয় তাকে ফিল্ড বুক বলে। এটি দেখে পরবর্তীতে টেবিলে পি-৭০ সীটে স্বহস্তে নকশা আমিনের জন্য এর ব্যবহার নিষিদ্ধ) অংকন করা হয়। 

মৌরাশি: পুরুষানুক্রমে কোনো ভূমি ভোগ দখল করাকে মৌরাশি বলে।

বায়া (Vender): বিক্রেতা, বিক্রেতার সম্পাদিত দলিলকে বলে বায়া দলিল।

মিনাহ (Deduction): কম, কমতি, জমি সিকস্তি হলে তার কর আদায় স্থগিত করাকে মিনাহ বলে।

নালজমি: আবাদ যোগ্য সমতল জমিকে নাল জমি বলে।

তৌজি: ১৭৯৩ সালে প্রবর্তীত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় ভূমির জন্য কালেক্টরীতে যে রেজিস্ট্রি বই থাকতো তাকে তৌজি বলে। প্রত্যেকটি তৌজিরই ক্রমিক নম্বর থাকে। জমিদারের অধীনে প্রজার জোতকেও তৌজি বলা হতো।

কটকবলা: সুদের পরিবর্তে মহাজনের দখলে জমি দিয়ে ঋণ নিয়ে যে দলিল দেয়া হয় তাকে কটকবলা বলে। খাতক যতদিন টাকা পরিশোধ করবে না ততদিন মহাজন এ জমি ভোগ দখল করতে থাকে।

চান্দিনা: বাজারের ভিটি ভূমিকে চান্দিনা বলা হয়। এটি মূলত দোকানদারের হোল্ডিং।

চালা ভূমি: নালের চেয়ে উঁচু আবাদী ভূমি, পুকুরের পাড় ইত্যাদি রকম ভূমিকে বলে চালা।

হালট: জমিজমার মধ্যবর্তী চওড়া আইল বলা হয়। বা পথ যার উপর দিয়ে চাষী হাল বলদ নিয়ে চলাফেরা করে। 

চর্চা জরিপ: চর্চা অর্থ চর পয়স্থি জমি বা চরের জরিপ কে বলে চর্চা জরিপ। এই জরিপ করে যে নকশা তৈরি করা হয় তাকে চর্চা নকশা বলে।

তফসিল: কোনা জমি যে মৌজায় অবস্থিত সে মৌজার নাম, জে. এল. নং, খতিয়ান নং, দাগ নং, জমির শ্রেণী, পরিমাণ, জমির চৌহদ্দি বর্ণনা ইত্যাদি পরিচিতি সম্বলিত বিবরণকে ঐ জমির তফসিল বলে।

বাইদ: নীচু কৃষি জমিকে বাইদ বলে।

হাওর: প্রাকৃতিক কারণে কোনো বিস্তীর্ণ নিম্নভূমি জলমগ্ন হলে তাকে হাওর বলে।

বাওড়: নদী তার চলমান পথ হতে গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য পথে প্রবাহিত হলে পূর্বের গতিপথের স্রোতধারা বন্ধ হয়ে যে বিশাল জলাভূমির সৃষ্টি করে তাকে বলে বাওড়। নদীর বাক থেকে বাওড় কথার সৃষ্টি হয়েছে।

রেভিনিউ কোর্ট: রেভিনিউ অফিসার যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে এক বা একাধিক পক্ষের শুনানী নিয়ে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন তখন তাকে বলে রিভিনিউ কোর্ট (বিধি-১৩৪, এস. এস. ম্যানুয়াল-১৯৩৫)। দেওয়ানী কার্যবিধির ৫(২) ধারা মতে যে আদালত কৃষি জমির খাজনা/রাজস্ব বা মুনাফা সম্পর্কে কাযর্যক্রম গ্রহণের এখতিয়ারবান তাকে রেভিনিউ কোর্ট বলে।

প্রজাবিলি: কোনো জমি যথাযথভাবে কোনো প্রজাকে বন্দোবস্ত দেয়া হলে তাকে বলে প্রজাবিলি।

ছানি মামলা: দেওয়ানী আদালতে কোনো মামলার রায় বা ডিক্রী হলে বা তদবির অভাবে মামলা খারিজ হলে, রায় বা ডিক্রী বা খারিজ হওয়ার বিষয়টি জানার ১ মাসের মধ্যেদেওয়ানী কার্যবিধির অর্ডার ৯, রুল ৪, ৮ ৯, ১৩ অনুযায়ী আবেদনের মাধ্যমে মামলাটির পুনবহাল ঘটানো যায়। এরূপ আবেদন মঞ্জুর হলে মামলাটি যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই পুনরায় শুরু হবে। এটিই ছানি মামলা।

রায়: ডিক্রী বা আদেশের ভিত্তি হিসেবে বিচারক যে বিস্তারিত বিবৃতি দেন তাই হলো রায়। রায়ে আদেশের সমর্থনে যে সকল যুক্তি বা কারণাদির উপর আদালত নির্ভর করে তার বিবরণ উল্লেখ থাকে।

ডিক্রী: মামলার নম্বর, পক্ষ পরিচয়, দাবীর বিবরণ, মামলার খরচের পরিমাণ, খরচ কি অনুপাতে, কে বহন করবে তা এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি এতে থাকে। স্থাবর সম্পত্তির ডিক্রীতে সেটেলমেন্ট পর্চার দাগ, খতিয়ানও উল্লেখ থাকে। মূলত ডিক্রী হলো রায়ের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত আদালতের দলিল।

এনুয়িটি (Annuity): ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে সরকার যখন বিদ্যমান হাট-বাজার সমূহ গ্রহন করে নেয় তখন সেখানে অবস্থিত কোনো ওয়াকফ্ সম্পত্তি হাট-বাজারের প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করা হয়ে থাকলে ঐ সম্পত্তির জন্য ক্ষতিপূরণের অতিরিক্ত (প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার স্বার্থে) বার্ষিক বৃত্তি বা অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এটিই হলো এনুয়িটি।

নয়ন জুলি (Nayan Jhuli): বাঁধ সংলগ্ন নীচু জলা ভূমিকে বলে নয়ন জুলি।

পেরীফেরী: হাট বাজারের আয়তন প্রতিয়নত সম্প্রসারিত হয়ে থাকে। এরূপ সম্প্রসারিত অংশকে বাজারের অন্তর্ভুক্ত করা, হাট-বাজারের তোহামহাল, চান্দিনা ভিটি ও বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সার্ভেয়ার দ্বারা সরজমিনে পরিমাপ পূর্বক হাট-বাজারের নক্সা তৈরীসহ চতুসীমা নির্ধারণ করাকে বলে পেরীফেরী।

ফারায়েজ: মুসলিম (সুন্নী) উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোনো মুসলিম ইন্তোকাল করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে (ওয়ারিশগণ) কতটুকু পাবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ বা বণ্টন করার নামই হচ্ছে ফারায়েজ।
আসাবা (রেসিডুয়ারী): আসাবা বা রেসিডুয়ারী শব্দের অর্থ অবশিষ্টাংশ ভোগী মুসলিম আইনে তিন ধরনে উত্তরাধিকারের মধ্যে আসাবা এক ধরনের উত্তরাধিকারী। মুসলিম উত্তরাধিকার মতে অবশিষ্টাংশ ভোগী বলতে তাদের বলা হয়েছে যারা সম্পত্তির কোনো নির্ধারিত অংশ পান না কিন্তু অংশীদারদের মধ্যে নির্ধারিত অংশ বন্টনের পর অবশিষ্ট অংশের উত্তরাধিকার হন।

পরিত্যক্ত সম্পত্তি: ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ ইং তারিখ হতে যে সকল নাগরিক আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে সম্পত্তি পরিত্যাগ করে এদেশ ছেড়ে চলে যায় তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বলে এটি মূলত, বিহারীদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি।

জমির পরিমাপ শতাংশ

জমির পরিমাপ  শতাংশ এবং অন্যান্য এককের সম্পর্ক

ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:

  • ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
  • কাঠা
  • বিঘা
  • একর

এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা “সরকারি মান” (Standard Measurement) বলে পরিচিত।

বাংলাদেশে জমির পরিমাপের জন্য বিভিন্ন একক ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে শতক, কাঠা, বিঘা, এবং একর অন্যতম। এগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বোঝা জরুরি, কারণ জমির আয়তন এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করার জন্য সঠিক হিসাব জানা প্রয়োজন।

নিচে শতক এবং অন্যান্য এককের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরা হলো:

১. একরের সাথে সম্পর্ক:

  • ১ একর = ১০০ শতাংশ
  • ১ একর = ৬০.৬ কাঠা
  • ১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক

২. শতকের সাথে সম্পর্ক:

  • ১ শতক = ১/১০০ একর
  • ১ শতক = ০.৬০৬ কাঠা
  • ১ শতক = ৩৩.৩৩৩৩৩৩৩৩ বিঘা
  • ১ শতক = ৪.৮৪ বর্গগজ
  • ১ শতক = ৪৩.৫৬ বর্গফুট

৩. কাঠার সাথে সম্পর্ক:

  • ১ কাঠা = ১৬ ছটাক
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ
  • ১ কাঠা = ২০ গন্ডা
  • ১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট

৪. বিঘার সাথে সম্পর্ক:

  • ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ
  • ১ বিঘা = ২০ কাঠা
  • ১ বিঘা = ১৬১৩ বর্গগজ
  • ১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট
  • ১ বিঘা = ৩.০৩ একর

৫. ছটাকের সাথে সম্পর্ক:

  • ১ ছটাক = ১/১৬ কাঠা
  • ১ ছটাক = ১/১০০ একর
  • ১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট

৬.ইঞ্চি, ফুট ও গজঃ

  • ১২” ইঞ্চি = ১ ফুট
  • ৩ ফুট= ১ গজ
  • ভূমি যে কোন সাইজের কেন ভূমির দের্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে।
    যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ-২২
  • গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।

৭.বর্গগজ/বর্গফুট অনুযায়ী শতাংশ ও একরের পরিমাণঃ

 
  • ৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর ধরে
  • ৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর
  • ৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর
  • ১৬১৩ বর্গগজ= ১ বিঘা
  • ১৪৫২০বর্গফুট= ১ বিঘা
  • ৪৩৫.৬০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ
  • ৮০.১৬ বর্গগজ= ১ কাঠা
  • ৭২১.৪৬ বর্গফুট= ১ কাঠা
  • ৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক
  • ২০ বর্গহাত = ১ ছটাক
  • ১৮ ইঞ্চি ফুট= ১ হাত (প্রামাণ সাই)

 

৮.কাঠা, বিঘা ও একরের মাপঃ

  • ১ কাঠা = ১৬৫ অযুতাংশ
  • ১৬ ছটাক = ১/ কাঠা
  • ০.০১৬৫ অযুতাংশ = ১/কাঠা
  • ০.৩৩ শতাংশ বা ০.৩৩০০ অযুতাংশ = ১ বিঘা
  • ২০ (বিশ) কাঠা = ১ বিঘা
    ১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক = ৬০.৫ কাঠা

৯.আধুনিক ও দেশীয় এককের রুপান্তরঃ

  • ১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেমি.
  • ১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি
  • ১ মাইল = ১.৬১ কিমি.
  • ১ নাইটিকেল মাইল = ১.৮৫৩ কিমি.
  • ১ বর্গ ইঞ্চি = ৬.৪৫ বর্গ সেমি.
  • ১ হেক্টর = ১০০০০ বর্গ মিটার
  • ১ কাঠা = ৭২০ বর্গ ফুট 
  •  ২৬.৮ ফুট, প্রস্থ ২৬.৮ ফুট অথাবা ৩০ × ২৪)
    ১ একর = ৪০৪৭ বর্গ মিটার
  • ১ বর্গ কিমি. = ২৪৭ একর
  • ১ একর  =১০০শতাংশ = 
  • ৩ বিঘা= ৮ ছটাক
  • ১ বিঘা  =২০ কাঠা= ৩৩ শতাংশ
  • ১ চেইন =২২গজ = ৬৬ ফুট
  • ১ মিটার = ১০০ সেমি. = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি = ৩.২৮ ফুট
  • ১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গ ফুট= ১৫৫০ বর্গ ইঞ্চি = ১০০০০ বর্গ সেমি.
  • ১ বর্গ কিমি. = .৩৮৬১ বর্গ মাইল = ১০০ হেক্টর ২৪৭ একর
  • ১ বর্গ মাইল = ২.৫৮৯ বর্গ কিমি. =২৫৯ হেক্টর= ৬৪০ একর

জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক এককের সম্পর্ক

জমির পরিমাপ শতকের ভিত্তিতে করার সময়, বিভিন্ন আঞ্চলিক এককের সঙ্গে শতাংশের সম্পর্ক বুঝে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পরিমাপে জমির সঠিক হিসাব পাওয়ার জন্য নীচের সম্পর্কগুলো জানা দরকার:

  • ১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ: যদি আপনার জমি বর্গগজে মাপা হয়, তাহলে প্রতিটি শতাংশে জমির পরিমাণ ৪৮.৪০ বর্গগজ।
  • ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট: বর্গফুটে মাপা জমির জন্য, ৪৩৫.৬০ বর্গফুট = ১ শতাংশ।
  • ১ একর = ১০০ শতাংশ: একর এবং শতকের সম্পর্ক সরল, ১ একর = ১০০ শতাংশ।
  • ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ: বিঘার পরিমাপে জমি হিসাব করার ক্ষেত্রে ১ বিঘা জমি ৩৩ শতাংশের সমান।
  • ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ: কাঠা হিসাবে জমি মাপা হলে, ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ জমি।

এই সম্পর্কগুলো জানার মাধ্যমে জমির বিভিন্ন একককে শতাংশের হিসাবে রূপান্তর করা সহজ হয় এবং জমির পরিমাপে সঠিক হিসাব নিশ্চিত করা যায়।

জমির পরিমাপ শতাংশ

জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার জন্য ১ শতাংশের মান বিভিন্ন এককে রুপান্তর

জমির পরিমাপে বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন একক ব্যবহৃত হয়, যা শতাংশ হিসাবের সঙ্গে তুলনা করে বোঝা সহজ হয়। এই সম্পর্কগুলো জানা থাকলে শতকের ভিত্তিতে জমির সঠিক পরিমাপ করা আরও কার্যকর হয়:

  • বর্গগজ এবং শতাংশ: ৪৮.৪০ বর্গগজ = ১ শতাংশ। অর্থাৎ, যদি জমির আয়তন ৪৮.৪০ বর্গগজ হয়, তাহলে তা ১ শতাংশের সমান।

  • বর্গফুট এবং শতাংশ: ৪৩৫.৬০ বর্গফুট = ১ শতাংশ। বর্গফুটে মাপা জমির জন্য, শতককে হিসাব করা সহজ হয় কারণ ১ শতাংশ জমির পরিমাণ ৪৩৫.৬০ বর্গফুটের সমান।

  • একরের সঙ্গে শতকের সম্পর্ক: ১ একর = ১০০ শতাংশ। অর্থাৎ, একরের ভিত্তিতে জমি মাপার সময় ১০০ শতাংশে ১ একর জমি হয়।

  • বিঘা এবং শতাংশ: ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ। জমির মাপ বিঘায় করার সময়, ৩৩ শতাংশ জমি ১ বিঘার সমান হয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ অঞ্চলে সাধারণত ব্যবহৃত পরিমাপ।

  • কাঠা এবং শতাংশ: ১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ। জমির পরিমাণ কাঠায় মাপা হলে, ১ কাঠা ১.৬৫ শতাংশ জমির সমান হয়।

জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার জন্য বর্গগজ, বর্গফুট অনুযায়ী জমির পরিমাপ

জমির আকার নির্ধারণ করতে বাংলাদেশে বর্গগজ এবং বর্গফুট দুটি প্রচলিত একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন পরিমাপের জমির হিসাব সহজ করতে নিচে বর্গগজ এবং বর্গফুট অনুযায়ী জমির পরিমাপ সম্পর্কিত মূল তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো:

  1. একরের পরিমাপ

    • ১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ
    • ১ একর = ৪৩৫৬০ বর্গফুট
      অর্থাৎ, যদি জমির আয়তন ৪৮৪০ বর্গগজ বা ৪৩৫৬০ বর্গফুট হয়, তবে তা ১ একরের সমান বলে ধরা হয়।
  2. বিঘার পরিমাপ

    • ১ বিঘা = ১৬১৩ বর্গগজ
    • ১ বিঘা = ১৪৫২০ বর্গফুট
      এতে বোঝা যায় যে, জমি ১৬১৩ বর্গগজ বা ১৪৫২০ বর্গফুট পরিমাপের হলে তা ১ বিঘার সমান হবে।
  3. কাঠার পরিমাপ

    • ১ কাঠা = ৮০.১৬ বর্গগজ
    • ১ কাঠা = ৭২১.৪৬ বর্গফুট
      কাঠার হিসাবে জমি পরিমাপ করলে ৮০.১৬ বর্গগজ বা ৭২১.৪৬ বর্গফুট জমি ১ কাঠার সমান হয়।
  4. শতকের পরিমাপ

    • ১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ
    • ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
      জমির পরিমাপ শতকের ভিত্তিতে করলে ১ শতাংশ জমি ৪৮.৪০ বর্গগজ বা ৪৩৫.৬০ বর্গফুটের সমান হয়।
  5. ছটাকের পরিমাপ

    • ১ ছটাক = ৫.০১ বর্গগজ
    • ১ ছটাক = ৪৫.০৯ বর্গফুট
      ছোট আকারের জমির পরিমাপে ছটাক একটি ছোট একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১ ছটাক ৫.০১ বর্গগজ বা ৪৫.০৯ বর্গফুটের সমান হয়।
  6. বর্গমিটারের পরিমাপ

    • ১ বর্গমিটার = ১.১৯৬ বর্গগজ
    • ১ বর্গমিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট
      আন্তর্জাতিক পরিমাপ হিসেবে বর্গমিটার ব্যবহৃত হয়। ১ বর্গমিটার জমির আয়তন ১.১৯৬ বর্গগজ বা ১০.৭৬ বর্গফুটের সমান।

এই পরিমাপগুলো জমির হিসাব সহজ করতে এবং এককগুলোর মধ্যে রূপান্তর করতে সহায়ক।

জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার জন্য একর হিসাব করার সহজ পদ্ধতি

জমির পরিমাপ একক হিসেবে একর প্রচলিত ও ব্যবহৃত একটি মাপ। জমির আয়তন নির্ধারণ করতে দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের গুণফল একরে কিভাবে হিসাব করা যায়, তার সাধারণ নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলো:

  1. বর্গগজ থেকে একরে হিসাব
    ১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ। জমির আয়তন যদি বর্গগজে দেওয়া থাকে, তবে সেটিকে একরে পরিণত করতে ৪৮৪০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

    উদাহরণ: যদি জমির আয়তন ৯৬৮০ বর্গগজ হয়, তাহলে একরে হিসাব করতে হবে:৯৬৮০÷৪৮৪০=২একর

  2. বর্গফুট থেকে একরে হিসাব
    ১ একর = ৪৩৫৬০ বর্গফুট। জমির আয়তন যদি বর্গফুটে দেওয়া থাকে, তবে একরে পরিণত করতে ৪৩৫৬০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

    উদাহরণ: যদি জমির আয়তন ৮৭১২০ বর্গফুট হয়, তাহলে একরে হিসাব হবে:৮৭১২০÷৪৩৫৬০=২একর

  3. শতক থেকে একরে হিসাব
    ১ একর = ১০০ শতাংশ। জমির পরিমাণ যদি শতাংশে থাকে, তাহলে একরে হিসাব করতে ১০০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

    উদাহরণ: যদি জমির পরিমাণ ২০০ শতাংশ হয়, তাহলে তা একরে হবে:২০০÷১০০=২একর

  4. কাঠা থেকে একরে হিসাব
    ১ একর = ৬০.৬ কাঠা। জমির পরিমাণ কাঠায় থাকলে সেটিকে একরে রূপান্তর করতে ৬০.৬ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

    উদাহরণ: যদি জমির আয়তন ১২১.২ কাঠা হয়, তাহলে একরে হিসাব হবে:১২১.২÷৬০.৬=২একর

  5. বিঘা থেকে একরে হিসাব
    ১ একর = ৩.০৩ বিঘা। জমির আয়তন যদি বিঘায় দেওয়া থাকে, তবে একরে রূপান্তর করতে ৩.০৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

    উদাহরণ: যদি জমির পরিমাণ ৬.০৬ বিঘা হয়, তাহলে একরে হিসাব হবে:৬.০৬÷৩.০৩=২একর

জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থেকে একরে হিসাব করার পদ্ধতি

জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গজে (যেমন, ২২০ গজ × ২২ গজ) দেওয়া থাকলে, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গুণফল বর্গগজে পরিণত করে ৪৮৪০ দিয়ে ভাগ করলে একরের পরিমাণ পাওয়া যাবে।

উদাহরণ:
জমির দৈর্ঘ্য যদি ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ হয়, তাহলে বর্গগজে হিসাব হবে:

২২০×২২=৪৮৪০ বর্গগজ=১একর

এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সহজেই জমির পরিমাণ একরে পরিণত করা যায়।

জমির পরিমাপ শতাংশ বের করার জন্য গান্টার শিকল জরীপ এর ব্যাবহার: ভূমি পরিমাপের এক সঠিক ও সহজ পদ্ধতি

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সহজ ও সঠিক করার লক্ষ্যে ফরাসী বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এক বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা এখন ‘গান্টার শিকল’ নামে পরিচিত। গান্টার শিকল মূলত একধরনের ইস্পাত শিকল, যা ভূমির পরিমাপের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই শিকলটি ২০.৩১ মিটার বা প্রায় ৬৬ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট, এবং এটি ভূমি পরিমাপের জন্য খুবই কার্যকরী।

গান্টার শিকল মূলত ১০০ ভাগে বিভক্ত থাকে, যা প্রতিটি ‘লিঙ্ক’ বা ‘জরীপ’ নামে পরিচিত। প্রতিটি লিঙ্কের দৈর্ঘ্য ৭.৯২ ইঞ্চি। এই শিকলটি ভূমির পরিমাপের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, এবং একর, শতক, বা মাইলস্টোন বসানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

গান্টার শিকলের ব্যবহারের বিস্তারিত:

  • প্রতি এক লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি
  • দৈর্ঘ্য ১০ চেইন প্রন্থে:
    • ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর
  • নস ফুলি বা মার্কিং:
    • গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর ‘নস ফুলি’ (মার্কিং) স্থাপন করা হয়।
    • ২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়।
    • ৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়।
    • ৪০ লিঙ্ক বা ৩১৬.৮ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়।
    • ৫০ লিঙ্ক বা ৩৯৬.০ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়।
    • ৮০ গান্টার বা ১৭৬০ গজ পর মাইলস্টোন স্থাপন করা হয়।

একর, শতক এবং ভূমির পরিমাপ:

  • ১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল
  • ১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক
  • ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর

ভূমি মাপার অন্যান্য পদ্ধতি:

আমাদের দেশে জমি মাপার সময় চেইন এবং ফিতা ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার জন্য চেইন ব্যবহার করা হয়, এবং প্রায়ই আমিন বা সার্ভেয়ররা ফিতাও ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহারে সুবিধা হয়।

গান্টার শিকলের এই পদ্ধতি আমাদের দেশে ভূমি জরীপের একটি জনপ্রিয় ও কার্যকরী পদ্ধতি হয়ে উঠেছে।

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?