চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত? জেনে নিন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার, দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনন্য দিকগুলি যা এই বন্দরনগরীকে আলাদা করে তোলে।চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার প্রধান শহর। এটি বন্দরনগরী নামে পরিচিত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। চট্টগ্রাম তার পাহাড়, সমুদ্র এবং উপত্যকার জন্য খ্যাত।

 

চট্টগ্রাম শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। এখানে রয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়, সবুজ বনাঞ্চল, স্বচ্ছ জলধারার নদী এবং নীল সমুদ্র। ফয়েজ লেক, সীতাকুন্ড, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, এবং চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ।

 

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানে দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর অবস্থিত যা দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও, চট্টগ্রাম এশিয়ার ৭ম এবং বিশ্বের ১০ম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর। এ শহরটি বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যও পরিচিত, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত: ইতিহাস ও সংস্কৃতি

চট্টগ্রামের ইতিহাস বহু বৈচিত্রময় এবং সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মের মিলনস্থল হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নামের ইতিহাস

চট্টগ্রামের নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের নামের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা না গেলেও, বিভিন্ন প্রাচীন দলিল এবং মানচিত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সুহ্মদেশ, চাতগাঁও, চৈত্যগ্রাম, চট্টল, চক্রশালা, শ্রীচট্টল, চাটিগ্রাম ইত্যাদি। প্রতিটি নামের পিছনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা এবং ইতিহাস।

চৈত্যগ্রাম

বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মতে, প্রাচীনকালে এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ চৈত্য (বৌদ্ধমন্দির) ছিল, তাই এ স্থানটি চৈত্যগ্রাম নামে পরিচিত ছিল। চৈত্য অর্থ বৌদ্ধমন্দির এবং গ্রাম অর্থে চৈত্যগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে। পরবর্তীকালে এই নাম বিবর্তিত হয়ে চট্টগ্রাম রূপ ধারণ করে।

চতুঃগ্রাম

ব্রিটিশ আমলের গেজেটিয়ার লেখক ও’মলি সাহেবের মতে, সংস্কৃত চতুঃগ্রাম শব্দ থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে। চতুঃ অর্থ চার এবং গ্রাম শব্দ যুক্ত হয়ে চতুঃগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে।

চট্টল

চট্টগ্রামের তান্ত্রিক ও পৌরাণিক নাম ছিল চট্টল। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণগ্রন্থে চট্টল নামের উল্লেখ দেখা যায়।

প্রাচীন ইতিহাস

প্রাচীনকালে গ্রিক এবং মিশরীয় ভৌগোলিকদের বিবরণে চট্টগ্রামের কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিহাসবেত্তা ড. নলিনীকান্ত ভট্টাচার্য প্লিনির “পেরিপ্লাস” নামক গ্রন্থের ক্রিসকে চট্টগ্রামের দ্বীপ সন্দ্বীপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

পালবংশের শাসন

পালবংশের শাসনামলে আরব পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরকে “সমন্দর” নামে চিনতেন। ধর্মপালের শাসনামলে চট্টগ্রাম তার অধীনে ছিল।

চন্দ্রবংশের শাসন

দশম এবং একাদশ শতকে দক্ষিণ পূর্ববঙ্গে এবং আরাকানে চন্দ্ররাজারা চট্টগ্রামের শাসক ছিলেন। আরাকানের চন্দ্রবংশীয় রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া ৯৫৩ সালে বাংলা অভিযানে বের হন এবং সীতাকুন্ডে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। এর শিলালিপিতে লেখা হয় “চেৎ-ত-গৌঙ্গ” যার অর্থ “যুদ্ধ করা অনুচিৎ”। এই নাম থেকেই চট্টগ্রামের নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

মুসলিম শাসনামল

১৩৩৮ সালে সুলতান ফকরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম বিজয় করেন এবং এটি স্বাধীন সোনারগাঁও রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম বিভিন্ন সুলতান এবং রাজাদের অধীনে ছিল।

ইবনে বতুতার বিবরণ

১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত মুর পরিব্রাজক ইবনে বতুতা চট্টগ্রামে আসেন এবং তার বিবরণে উল্লেখ করেছেন, “বাংলাদেশের যে শহরে আমরা প্রবেশ করলাম তা হল সোদকাওয়াঙ (চট্টগ্রাম)। এটি মহাসমূদ্রের তীরে অবস্থিত একটি বিরাট শহর।”

চীনা পর্যটকের বিবরণ

পনের শতকে চট্টগ্রামের একটি বিবরণ পাওয়া যায় চীনা পরিব্রাজক ফেই-শিনের ভ্রমণ গ্রন্থে। তিনি ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের বর্ণনা দেন, “এ দেশটির উপসাগরের কূলে একটি সামুদ্রিক বন্দর আছে যার নাম চা-টি-কিয়াং।”

সুলতান হোসেন শাহ

১৪৯২ সালে সুলতান হোসেন শাহ বাংলা সুলতান হন এবং চট্টগ্রাম তার অধীনে আসে। তার শাসনামলে চট্টগ্রাম উত্তর আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

চট্টগ্রামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকের আগমন এবং তাদের শাসন চট্টগ্রামকে একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় শহর হিসেবে গড়ে তুলেছে।

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত: দর্শনীয় স্থানসমূহ

চট্টগ্রাম তার মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্যও পরিচিত।চট্টগ্রাম শহরে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো:

  1. জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর:

    • চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত দেশের একমাত্র জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর এটি। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনপ্রণালী প্রদর্শন করা হয়। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর এটি। প্রতিদিন ২০০-৩০০ জন দর্শনার্থী পরিদর্শন করে।
    • প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯৬৫
    • অবস্থান: আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
  2. কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি:

    • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এই সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রায় ৭৩১টি সমাধি রয়েছে।
    • অবস্থান: দামপাড়া, চট্টগ্রাম
  3. ইউরোপিয়ান ক্লাব:

    • এটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত একটি ক্লাব, যেখানে ১৯৩২ সালের ১০ আগস্ট বিপ্লবী শৈলেশ্বর চক্রবর্তী এবং পরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে আক্রমণ করা হয়।
    • অবস্থান: পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
  4. চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা:

    • ১০.২ একর জমির উপর অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় ৬৬ প্রজাতির ৬৫৭টি প্রাণী রয়েছে। এটি ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
    • অবস্থান: ফয়েজ লেক, খুলশী, চট্টগ্রাম
  5. পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত:

    • এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
    • অবস্থান: পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
  6. ফয়েজ লেক:

    • চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ এটি। এটি ১৯২৪ সালে খনন করা হয় এবং বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন।
    • অবস্থান: পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

এছাড়াও চট্টগ্রামে আরো বেশ কিছু ঐতিহাসিক এবং পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যা স্থানীয় এবং বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত:বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

চট্টগ্রাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের জন্মস্থান, যারা তাদের কর্মের মাধ্যমে দেশ এবং বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ অঞ্চলের এই মহান ব্যক্তিত্বরা। চলুন তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিই।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আত্মোৎসর্গ করেন। ১৯৩২ সালে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

বিনোদ বিহারী চৌধুরী

ব্রিটিশ বিরোধী চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী। তিনি সূর্য সেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ড. অনুপম সেন

সমাজবিজ্ঞানী এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. অনুপম সেন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার গবেষণা এবং একাডেমিক কর্মজীবন চট্টগ্রামের জ্ঞানসমাজকে সমৃদ্ধ করেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রিয়।

সূর্য সেন

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অসাধারণ নেতা সূর্য সেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন ঘটনার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের সূচনা হয়।

আবুল কাসেম খান

রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ এবং শিল্পপতি আবুল কাসেম খান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অগ্রসর হয়েছে।

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী

সুফি সাধক সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতার প্রচার করে চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

ডা. নুরুল ইসলাম

জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক, যিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখেছেন। তার কর্মজীবন দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট অধ্যায়।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার লেখাগুলি গভীর মানবিকতা ও দর্শনকে প্রকাশ করে।

আবুল ফজল

বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল ফজল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন। তিনি তার সাহিত্যকর্ম এবং শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যা চট্টগ্রামের শিক্ষাজগতকে সমৃদ্ধ করেছে।

চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত: ঐতিহ্যবাহী খাবার

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও সুস্বাদু কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করা যাক। চট্টগ্রামের খাবার তার অনন্য স্বাদ ও ভিন্নতাময় রান্নার কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

শুঁটকি মাছ

শুঁটকি মাছ চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যা বিশেষ প্রক্রিয়ায় রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। শীতকালীন সবজির সঙ্গে ছুরি শুঁটকি, তেল-পেঁয়াজ-মশলা দিয়ে লইট্টা শুঁটকি, এবং মরিচ-পেঁয়াজ-সরিষা মেখে ঝাল ঝাল চিংড়ি শুঁটকির ভর্তা চট্টগ্রামের খাবারের অন্যতম আকর্ষণ। ছুরি, লইট্টা এবং চিংড়ি শুঁটকি বেশি জনপ্রিয়। বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার, সোনাদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে শুঁটকি মাছ বেশি তৈরি হয়। শুঁটকি মাছ এখন শুধু গরিবের খাবার নয়, এটি দেশের বিত্তশালীদের ডাইনিং টেবিল এবং বিয়ের মেনুতেও জায়গা করে নিয়েছে।

মেজবানি মাংস

মেজবানি মাংস চট্টগ্রামের একটি বিশেষ খাবার যা ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এতে থাকে চনার ডাল, নলার ঝোল এবং দেশি গরুর মাংস। মেজবানি মাংস বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করা হয়, যা বাবুর্চিরা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন। এর স্বাদ এবং ঘ্রাণ একে অন্যান্য মাংসের পদ থেকে আলাদা করে তোলে। এককালে বাড়ির উঠোনের আয়োজন মেজবানি মাংস এখন শুধু বিয়ে, আকিকা, মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা রাজনৈতিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ নেই, এটি পাঁচ তারকা হোটেল এবং নামী-দামি রেস্টুরেন্টেও পাওয়া যায়।

দুরুস

চামড়া ছাড়ানো আস্ত মুরগী ঘন ঝোল দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করাকে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘দুরুস কুরা’ বলা হয়। এর ঝোলের স্বাদ এবং ঘ্রাণ একে অন্যান্য মুরগীর আইটেম থেকে আলাদা করে তোলে। দুরুস মুরগী চট্টগ্রামের জামাই আদর, অতিথি আপ্যায়ন এবং বিশেষ মেহমানদারিতে জনপ্রিয়। দুরুস এখন চট্টগ্রামের অভিজাত হোটেলগুলোতেও বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয়।

মহেশখালীর পান

মহেশখালীর পান তার চুন, সুপারি, মশলার মিশ্রণে মিষ্টি স্বাদের জন্য বিখ্যাত। এই পান চিবিয়ে মুখে একটি মিষ্টি স্বাদ আসে যা একে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। মহেশখালীর প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে এই পান চাষ করা হয়। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং ঢাকায় মহেশখালীর পান সরবরাহ করা হয়। এটি সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশেও রফতানি হয়।

বেলা বিস্কুট

প্রায় শত বছর আগে চট্টগ্রামের গণি বেকারিতে প্রথম বানানো হয় বেলা বিস্কুট। মচমচে, সুস্বাদু এবং বড় সাইজের কারণে এটি অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ময়দা, ডালডা, গুঁড়ো দুধ, চিনি, লবণ এবং তেল মিশিয়ে বিশেষ মাওয়া দিয়ে তৈরি এই বিস্কুট চায়ের সঙ্গে খেতে চমৎকার। গণি বেকারির বেলা বিস্কুট যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।

চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের নয়, পর্যটকদের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। প্রতিটি খাবারের স্বাদ ও গুণগত মানে রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য যা চট্টগ্রামের খাদ্যসংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

চট্টগ্রামের নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। বৌদ্ধ চৈত্য থেকে "চৈত্যগ্রাম", সংস্কৃত "চতুঃগ্রাম", এবং তান্ত্রিক ও পৌরাণিক "চট্টল" ইত্যাদি নামের উৎস হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর
  • কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি
  • ইউরোপিয়ান ক্লাব
  • চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
  • ফয়েজ লেক

চট্টগ্রামের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার: প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহিদ।
  • ড. মুহাম্মদ ইউনূস: নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
  • সূর্য সেন: ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা।
  • আবুল ফজল: প্রখ্যাত সাহিত্যিক।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • শুঁটকি মাছ
  • মেজবানি মাংস
  • দুরুস কুরা
  • মহেশখালীর পান
  • বেলা বিস্কুট
Summary
চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত
Article Name
চট্টগ্রাম কিসের জন্য বিখ্যাত
Description
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার প্রধান শহর। এটি বন্দরনগরী নামে পরিচিত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। চট্টগ্রাম তার পাহাড়, সমুদ্র এবং উপত্যকার জন্য খ্যাত।
Author
Publisher Name
RBS Property BD
Publisher Logo

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?