হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি: একটি বিশদ পর্যালোচনা

হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি: একটি বিশদ পর্যালোচনা

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, যা ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু পরিবারের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে, বহু যুগ ধরে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আইনের অধীনে নারীর সম্পত্তি লাভের অধিকার ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে। ভারতের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (Hindu Succession Act) ১৯৫৬ সালে সংস্কার করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সম্পত্তি অধিকারে সমতা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হিন্দু আইনের অধীনে নারীরা এখনও পুরুষদের তুলনায় সম্পত্তির ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হন।

হিন্দু আইনের প্রাথমিক ধারা ও নারীর সম্পত্তি অধিকার

বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মীয় আইন অনুযায়ী, নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকারের অধিকার সমান নয়। ঐতিহ্যগতভাবে, হিন্দু পুত্ররা পিতার সম্পত্তির প্রকৃত উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন, যেখানে কন্যারা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকেন। তবে, বিধবা স্ত্রী এবং অবিবাহিত কন্যারাও সম্পত্তি লাভের অধিকার রাখেন, কিন্তু তাদের এই অধিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক এবং সম্পূর্ণ নয়।

১. কন্যার সম্পত্তি অধিকার

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের অধীনে কন্যারা উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারেন, তবে এই অধিকার সাধারণত পুত্রদের অধিকার থেকে অনেক কম। মেয়েদের বিয়ের পর বাবার সম্পত্তির অধিকার খর্ব হয় এবং সাধারণত তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে পারেন না। যদিও বিধান রয়েছে যে, অবিবাহিত মেয়ে বা বিধবা মেয়ে পিতার সম্পত্তি থেকে অংশ লাভ করতে পারে, তবুও এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

২. বিধবার সম্পত্তি অধিকার

হিন্দু বিধবাদের ক্ষেত্রে সম্পত্তি লাভের অধিকার তুলনামূলক বেশি, তবে এই সম্পত্তি তাদের জীবদ্দশাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিধবা নারীর সম্পত্তি স্বামীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি স্বামীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হয়।

আরও পড়ুন

৩. সম্পত্তির বণ্টন প্রক্রিয়ায় নারীর বৈষম্য

বাংলাদেশের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন নারীদের বঞ্চিত করে রাখার মূল কারণগুলোর একটি হলো “মিত্রাক্ষরা” এবং “দায়ভাগ” নামক দুটি পৃথক পদ্ধতি। মিত্রাক্ষরা পদ্ধতিতে, উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্রদের সর্বোচ্চ অধিকার প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, দায়ভাগ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যা নারীদের সম্পত্তি লাভের সুযোগ দিলেও তা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় কম।

হিন্দু আইনের সংস্কার এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট

ভারতে ২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনা হয়, যেখানে কন্যাদের পুত্রদের সমান সম্পত্তি অধিকার দেওয়া হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনও সংশোধন এখনো কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা এখনও সম্পত্তি বণ্টনে পুরুষদের তুলনায় যথেষ্ট বৈষম্যের শিকার।

উপসংহার

বাংলাদেশের হিন্দু আইনের অধীনে নারীদের সম্পত্তি অধিকারের বিষয়টি এখনও সমতা ও ন্যায্যতার অভাবে ভুগছে। পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি, যেন নারীরা সমানভাবে সম্পত্তি অধিকার লাভ করতে পারেন। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়নকারীদের এই ক্ষেত্রে সংস্কারের পথে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে হিন্দু নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।

রেফারেন্স:

    1. Chowdhury, A. (2021). The Evolution of Hindu Succession Law in India and Bangladesh. Dhaka Law Review.

    1. Basu, D. D. (2019). Introduction to the Constitution of India (23rd ed.). LexisNexis.

    1. Ruma, T. (2020). “Property Rights of Hindu Women: Bangladesh Perspective.” Bangladesh Journal of Law, 7(2), 45-63.

Summary
হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি: একটি বিশদ পর্যালোচনা
Article Name
হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি: একটি বিশদ পর্যালোচনা
Description
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, যা ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু পরিবারের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে, বহু যুগ ধরে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আইনের অধীনে নারীর সম্পত্তি লাভের অধিকার ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে। ভারতের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (Hindu Succession Act) ১৯৫৬ সালে সংস্কার করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সম্পত্তি অধিকারে সমতা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হিন্দু আইনের অধীনে নারীরা এখনও পুরুষদের তুলনায় সম্পত্তির ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হন। হিন্দু আইনের প্রাথমিক ধারা ও নারীর সম্পত্তি অধিকার বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মীয় আইন অনুযায়ী, নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকারের অধিকার সমান নয়। ঐতিহ্যগতভাবে, হিন্দু পুত্ররা পিতার সম্পত্তির প্রকৃত উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন, যেখানে কন্যারা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকেন। তবে, বিধবা স্ত্রী এবং অবিবাহিত কন্যারাও সম্পত্তি লাভের অধিকার রাখেন, কিন্তু তাদের এই অধিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক এবং সম্পূর্ণ নয়।
Author
Publisher Name
RBS Property
Publisher Logo

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?