সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) বাংলাদেশসহ আরও ছয়টি দেশকে ‘নিরাপদ’ দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সরাসরি পড়বে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের উপর। ইউরোপে আশ্রয় চাওয়া এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যেসব মানুষ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইউরোপে থাকার আবেদন করেন।
আশ্রয়ের আবেদনের হার কত ?
ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি নাগরিকদের আশ্রয়প্রাপ্তির হার মাত্র ৩.৯৪ শতাংশ, যেখানে ইইউ নির্ধারিত গড় হার ২০ শতাংশ। এই কম হারের কারণে এখন থেকে বাংলাদেশি আবেদনগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নাকচ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
‘নিরাপদ দেশ’ মানে কী?
‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা মানে সেই দেশটিতে মানবাধিকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে, সেই দেশ থেকে কেউ যদি আশ্রয়ের আবেদন করেন, তাহলে সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় না।
কাদের জন্য বেশি সমস্যা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে প্রকৃত বিপদে থাকা মানুষদের উপর। অনেক সময় কেউ হয়তো সত্যিই ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কারণে হুমকির মুখে থাকেন, কিন্তু ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার ফলে তার আবেদনটিও দ্রুত খারিজ হয়ে যাবে।
ইউরোপীয় কমিশনের বক্তব্য
ইইউ অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেছেন, “যেখানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, সেখানে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।” অর্থাৎ, যারা নিরাপদ দেশ থেকে এসেছে এবং যাদের আশ্রয়ের সম্ভাবনা কম, তাদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে এবং দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশিদের অবৈধ অভিবাসন কেন বাড়ছে?
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ও অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য মতে, প্রায় ৪৩,০০০ বাংলাদেশি আশ্রয়ের আবেদন করেন, যার বেশিরভাগই ঝুলে আছে বা খারিজ হয়েছে।
নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি
২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ‘ইইউ অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি’র দুটি নিয়ম আগেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ:
-
যেসব দেশের আশ্রয়প্রাপ্তির হার কম, তাদের আবেদন সীমান্তেই দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে।
-
একটি দেশকে সামগ্রিকভাবে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করা যাবে, আলাদা কোনো অঞ্চল বা গোষ্ঠীকে বাদ না দিয়ে।
অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ডানপন্থি সরকার এই তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ, মিশর ও তিউনিসিয়াকে তালিকাভুক্ত করাকে তাদের সরকারের একটি সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে ইউরোপের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোমেড রাইটস বলেছে, এই তালিকা বিভ্রান্তিকর এবং বিপজ্জনক, কারণ এতে এমন দেশও রয়েছে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ আছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। যারা সত্যিই সংকটে রয়েছেন, তাদের জন্য আশ্রয় পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল। ভবিষ্যতে ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশ বা কাজের সুযোগ পেতে হলে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও কূটনৈতিক এবং মানবাধিকার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে।
আপনার মতামত জানান:
এই সিদ্ধান্তে আপনি কী ভাবছেন? ইউরোপে আশ্রয়ের ভবিষ্যৎ কি আরও কঠিন হয়ে পড়বে? নিচে মন্তব্য করুন।
Source:বিবিসি বাংলা