জমির খতিয়ান: আপনার ভূমি অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিল

জমির খতিয়ান

জমির খতিয়ান হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল যা আপনার জমির মালিকানা স্বত্ব প্রমাণ করে। এই দলিলটি আপনার জমি সম্পর্কিত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে জমির পরিমাণ, অবস্থান, এবং মালিকের নাম।

জমির খতিয়ান পাওয়ার প্রথম ধাপ হল জমি জরিপ। এই প্রক্রিয়ায় একজন পেশাদার সার্ভেয়ার আপনার জমির সীমানা নির্ধারণ করেন এবং এর আয়তন মাপেন। জরিপের পর, প্রতিটি জমি খণ্ডকে একটি বিশেষ দাগ নম্বর দেওয়া হয়, যা জমিটিকে সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

Table of Contents

আপনার জমি যে মৌজায় অবস্থিত, সেটিও খতিয়ানে উল্লেখ থাকে। মৌজা হল একটি রাজস্ব গ্রাম, যা ভূমি প্রশাসনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ একক।

খতিয়ানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল খাজনা বা ভূমি কর। এটি জমির মালিককে সরকারকে প্রদান করতে হয় এবং জমির ধরন ও আকারের উপর নির্ভর করে।

যদি আপনি জমি ক্রয় করেন বা উত্তরাধিকার সূত্রে পান, তাহলে আপনাকে নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এর মাধ্যমে নতুন মালিকের নামে জমির রেকর্ড হালনাগাদ করা হয়।

মনে রাখবেন, আপনার জমির খতিয়ান সর্বদা হালনাগাদ রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনার সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত রাখতে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করবে। নিয়মিত ভূমি অফিস থেকে আপনার খতিয়ানের একটি কপি সংগ্রহ করুন এবং কোনো পরিবর্তন থাকলে তা আপডেট করুন।

জমির খতিয়ান বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। আসুন জমির খতিয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি:

১. জমির খতিয়ানের সংজ্ঞা:
জমির খতিয়ান হল একটি সরকারি দলিল যা একটি নির্দিষ্ট জমির মালিকানা, আয়তন, অবস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ধারণ করে।

২. খতিয়ানের গুরুত্ব:
• মালিকানা প্রমাণ: এটি জমির আইনি মালিকানার প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
• সীমানা নির্ধারণ: জমির সঠিক সীমানা নির্ধারণে সাহায্য করে।
• কর নির্ধারণ: ভূমি কর নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
• বিবাদ নিষ্পত্তি: জমি সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. খতিয়ানের প্রকারভেদ:
• এস.এ. খতিয়ান: State Acquisition খতিয়ান (১৯৫০-৫৬)
• আর.এস. খতিয়ান: Revisional Survey খতিয়ান (১৯৬৮-৭৮)
• বি.এস. খতিয়ান: Bangladesh Survey খতিয়ান (বর্তমানে চলমান)

৪. খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত তথ্য:
• মালিকের নাম ও ঠিকানা
• জমির পরিমাণ (একর বা শতাংশে)
• দাগ নম্বর
• মৌজার নাম
• জমির শ্রেণী (কৃষি, অকৃষি ইত্যাদি)
• খাজনার পরিমাণ

৫. খতিয়ান সংগ্রহ প্রক্রিয়া:
• স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন
• অনলাইনে আবেদন (www.land.gov.bd)
• নির্ধারিত ফি প্রদান

৬. খতিয়ান হালনাগাদকরণ:
• নামজারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
• জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পর
• উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে

৭. ডিজিটাল খতিয়ান:
বর্তমানে সরকার ডিজিটাল খতিয়ান ব্যবস্থা চালু করেছে, যা অনলাইনে খতিয়ান যাচাই ও সংগ্রহ করা সহজ করেছে।

৮. খতিয়ান সংরক্ষণের গুরুত্ব:
• সর্বদা খতিয়ানের একাধিক কপি সংরক্ষণ করুন
• নিরাপদ স্থানে রাখুন
• নিয়মিত হালনাগাদ করুন

৯. সতর্কতা:
• খতিয়ানে কোনো ভুল থাকলে দ্রুত সংশোধনের ব্যবস্থা নিন
• অনধিকার চর্চা বা জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকুন

১০. আইনি দিক:
• খতিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল
• জমি সংক্রান্ত মামলায় এটি প্রধান প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়

জমির খতিয়ান আপনার সম্পত্তির অধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করলে আপনি আপনার জমির অধিকার সুরক্ষিত রাখতে পারবেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতা এড়াতে পারবেন। নিয়মিত আপনার খতিয়ান যাচাই করুন এবং প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।

অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই: সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি

ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে, এখন আর জমির খতিয়ান যাচাই করতে ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকার একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে যেখানে আপনি সহজেই আপনার জমির খতিয়ান যাচাই করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে করবেন, তা জেনে নিন:

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ:
প্রথমেই www.land.gov.bd ওয়েবসাইটে যান। এখানে আপনি “অনলাইন খতিয়ান” অপশনটি দেখতে পাবেন।

২. প্রয়োজনীয় তথ্য নির্বাচন:
• বিভাগ: আপনার জমি যে বিভাগে অবস্থিত, তা নির্বাচন করুন।
• জেলা: নির্বাচিত বিভাগের অধীনে থাকা জেলাগুলি থেকে আপনার জেলা বাছুন।
• উপজেলা: আপনার জমির উপজেলা নির্বাচন করুন।
• মৌজা: জমি যে মৌজায় অবস্থিত, সেটি বেছে নিন।

৩. খতিয়ান যাচাইয়ের পদ্ধতি:
আপনি চারটি ভিন্ন পদ্ধতিতে আপনার খতিয়ান যাচাই করতে পারেন:

ক) খতিয়ান নম্বর দিয়ে:
• “খতিয়ান নম্বর” অপশনে ক্লিক করুন।
• আপনার খতিয়ান নম্বরটি লিখুন।

খ) দাগ নম্বর দিয়ে:
• “দাগ নম্বর” অপশনে ক্লিক করুন।
• আপনার জমির দাগ নম্বরটি লিখুন।

গ) জমির মালিকের নাম দিয়ে:
• “মালিকের নাম” অপশনে ক্লিক করুন।
• জমির মালিকের নাম লিখুন।

ঘ) মালিকের পিতা/স্বামীর নাম দিয়ে:
• “মালিকের পিতা/স্বামীর নাম” অপশনে ক্লিক করুন।
• সংশ্লিষ্ট নাম লিখুন।

৪. ক্যাপচা পূরণ:
নিরাপত্তার জন্য, সিস্টেম আপনাকে দুটি সংখ্যা যোগ করতে বলবে। সঠিক উত্তরটি নির্দিষ্ট বক্সে লিখুন।

৫. “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক:
সব তথ্য পূরণ করার পর “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করুন।

৬. ফলাফল পর্যালোচনা:
সিস্টেম আপনাকে খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্য দেখাবে। এতে থাকবে:
• মালিকের নাম ও ঠিকানা
• জমির পরিমাণ
• দাগ নম্বর
• জমির শ্রেণী (কৃষি, অকৃষি ইত্যাদি)
• খাজনার পরিমাণ

৭. খতিয়ানের কপি সংরক্ষণ:
প্রয়োজনে, আপনি এই পৃষ্ঠাটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন বা PDF আকারে সংরক্ষণ করতে পারেন।

সতর্কতা:
• নিশ্চিত হোন যে আপনি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন। ভুল তথ্য দিলে সঠিক খতিয়ান পাওয়া যাবে না।
• যদি আপনার জমির খতিয়ান অনলাইনে না পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন।
• অনলাইনে পাওয়া খতিয়ান সাধারণত সর্বশেষ হালনাগাদকৃত তথ্য দেখায়। তবে, কোনো সন্দেহ থাকলে ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিন।


অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই একটি দ্রুত ও সহজ প্রক্রিয়া। এটি আপনার সময় ও শ্রম বাঁচাবে। তবে, গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন বা আইনি প্রয়োজনে, সরাসরি ভূমি অফিস থেকে সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করা উচিত। নিয়মিত আপনার খতিয়ান যাচাই করে রাখুন, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দ্রুত নজরে আসে।

বিক্রেতার নামে সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে কি না?

• রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন, ২০০৪ এর ৫২এ ধারা অনুযায়ী বিক্রেতা বা তার পূর্বসূরির নামে সম্পত্তির সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে না।

• এই আইন ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুসরণ করে।

• সি এস / আর এস রেকর্ডে ভুল থাকলে বা নামজারি করতে দীর্ঘ সময় লাগলেও সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য রেকর্ড সংশোধন অথবা নামজারি আবশ্যক।

• বিক্রেতার জরুরি প্রয়োজন থাকলেও রেকর্ড সংশোধন বা নামজারি ছাড়া ভূমি বিক্রয়ের দলিল করা যাবে না।

এই নিয়মগুলি সম্পত্তির নিরাপদ ও আইনসম্মত হস্তান্তর নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

খতিয়ানের ভুল থাকলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে:

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় খতিয়ান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি জমির মালিকানা, পরিমাণ, সীমানা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই খতিয়ানে ভুল থাকতে পারে, যা ব্যাপক সামাজিক ও আর্থিক প্রভাব ফেলে।

খতিয়ানের ভুল শুধু একটি প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, এটি জমির মালিকদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ভুলগুলি সাধারণ বানান ভুল থেকে শুরু করে জটিল মালিকানা বিবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ফলে, একজন প্রকৃত মালিক তার নিজস্ব সম্পত্তির উপর অধিকার হারাতে পারেন, অথবা একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো জমির মালিক হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হতে পারেন।

খতিয়ানের ভুল উৎপত্তির কারণগুলি বহুমুখী। এর মধ্যে রয়েছে জরিপকালীন ত্রুটি, লিপিকরণে অসাবধানতা, জটিল আইনি পরিস্থিতি, প্রশাসনিক গাফিলতি, এবং কখনও কখনও ইচ্ছাকৃত বিকৃতি। এই ভুলগুলি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে, যা শুধু ব্যক্তিগত স্তরে নয়, সামগ্রিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে।

খতিয়ানের ভুল সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন ধরনের আইনি ও প্রশাসনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।

সুতরাং, খতিয়ানের ভুল বোঝা ও তা সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের অধিকার রক্ষা করতে এবং ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।

১. মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা:
• প্রকৃত মালিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া
• ভুল ব্যক্তি জমির মালিক হিসেবে বিবেচিত হওয়া
• পারিবারিক বিবাদ সৃষ্টি হওয়া

২. আইনি সমস্যা:
• জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা
• আদালতে প্রকৃত মালিকানা প্রমাণে জটিলতা
• ভূমি সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা

৩. আর্থিক ক্ষতি:
• জমি বিক্রি বা হস্তান্তরে বাধা
• ব্যাংক ঋণ গ্রহণে সমস্যা
• জমির মূল্য কম পাওয়া

৪. উন্নয়ন কার্যক্রমে বাধা:
• নির্মাণ কাজের অনুমতি পেতে সমস্যা
• সরকারি প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা

. কর সংক্রান্ত সমস্যা:
• ভুল ব্যক্তির নামে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ
• কর পরিশোধে জটিলতা
• বকেয়া কর জমা হওয়া

৬. পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সমস্যা:
• স্থানীয় সরকার কর্তৃক ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় ভুল
• কৃষি সহায়তা প্রদানে সমস্যা

৭. সামাজিক সম্পর্কের অবনতি:
• প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের মধ্যে বিরোধ
• সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি

৮. ব্যক্তিগত মানসিক চাপ:
• জমি হারানোর আশঙ্কা
• আর্থিক অনিশ্চয়তা
• দীর্ঘমেয়াদি আইনি লড়াইয়ের চাপ

৯. উত্তরাধিকার সমস্যা:
• সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনে জটিলতা
• ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আইনি সমস্যার সৃষ্টি

১০. সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে বাধা:
• কৃষি ঋণ পেতে সমস্যা
• ভূমি সংক্রান্ত সহায়তা পেতে অসুবিধা

এই সমস্যাগুলি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে। তাই খতিয়ানের ভুল দ্রুত সনাক্ত ও সংশোধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খতিয়ানের ভুলের কারণসমূহ

১. জরিপকালীন ত্রুটি:
• অপর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ
• জরিপকারীদের অসতর্কতা বা অদক্ষতা
• স্থানীয় লোকজনের ভুল তথ্য প্রদান

২. লিপিকরণে ভুল:
• হাতে লেখার সময় বানান ভুল
• সংখ্যা লিখনে ভুল (যেমন দাগ নম্বর বা জমির পরিমাণ)
• তথ্য প্রবেশের সময় কম্পিউটারে টাইপিং ভুল

৩. আইনি জটিলতা:
• জটিল ওয়ারিশ সমস্যা
• অস্পষ্ট আদালতের রায় বা আদেশ
• দলিল রেজিস্ট্রেশনে ত্রুটি

৪. প্রশাসনিক গাফিলতি:
• রেকর্ড হালনাগাদ না করা
• পুরানো তথ্য ব্যবহার করে নতুন খতিয়ান প্রস্তুত
• বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব

৫. প্রযুক্তিগত সমস্যা:
• পুরানো রেকর্ড ডিজিটাইজেশনের সময় ভুল
• সফটওয়্যার বা ডাটাবেস সংক্রান্ত সমস্যা

৬. ইচ্ছাকৃত বিকৃতি:
• দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভুল তথ্য অন্তর্ভুক্তি
• জালিয়াতি করে অন্যের জমি নিজের নামে লিপিবদ্ধ করা

৭. যোগাযোগের ব্যর্থতা:
• মালিকানা পরিবর্তনের তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানানো
• বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের অভাব

৮. জটিল মালিকানা কাঠামো:
• যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে সঠিক অংশ নির্ধারণে সমস্যা
• বহু প্রজন্ম ধরে অবিভক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতা

এই কারণগুলি একক বা সমন্বিতভাবে খতিয়ানে ভুল সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, খতিয়ান প্রস্তুত ও হালনাগাদ করার সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

খতিয়ানের ভুল সংশোধনের পদ্ধতি:

১. করণিক ভুল সংশোধন:

করণিক ভুল হলো খতিয়ানে হওয়া সাধারণ লিখন সংক্রান্ত ভুল। এর মধ্যে পড়ে:

  • নামের ভুল
  • অংশ বসানোর হিসাবে ভুল
  • দাগসূচিতে ভুল
  • ম্যাপের সাথে রেকর্ডের অমিল
  • জরিপকালে বাবার মৃত্যুর পরও তার নামে রেকর্ড হওয়া

সংশোধন প্রক্রিয়া:

  • সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড এই ধরনের ভুল সংশোধন করেন
  • আবেদন বা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হয়
  • সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ দিয়ে শুনানি নেওয়া হয়
  • আপত্তি না থাকলে সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়
  • প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩০-৩৫ দিন সময় লাগে
  • আবেদনের সাথে ২০ টাকার কোর্ট ফি লাগে

২. প্রতারণামূলক লিখন সংশোধন:

কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ানে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে, তা সংশোধনের জন্য:

  •  রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা অনুযায়ী সংশোধনের ব্যবস্থা নেন
  • প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়

৩. যথার্থ ভুল সংশোধন:

এটি একটি বড় ধরনের ভুল যা সাধারণ করণিক ভুলের চেয়ে জটিল:

  • ভূমি আপিল বোর্ড এই ধরনের ভুল সংশোধনের আদেশ দিতে পারে
  • জটিল প্রকৃতির হওয়ায় এর জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন

৪. সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান সংশোধন:

সর্বশেষ জরিপের পর প্রকাশিত খতিয়ানে কোনো ভুল থাকলে:

  • ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়
  • প্রয়োজনে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যাওয়া যায়

৫.খতিয়ান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • সর্বশেষ খতিয়ানের সত্যায়িত কপি
  • সংশ্লিষ্ট মৌজার এসএ ও বিএস মৌজা ম্যাপ
  • ওয়ারিশ সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • মূল দলিলের সত্যায়িত কপি
  •  ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ
  • আদালতের রায়/আদেশের কপি (যদি থাকে)

সংশোধিত খতিয়ানের কপি পেতে ১১৫০ টাকা ফি জমা দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে সব ধাপ অনুসরণ করা জরুরি।

Summary
জমির খতিয়ান: আপনার ভূমি অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিল
Article Name
জমির খতিয়ান: আপনার ভূমি অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিল
Description
জমির খতিয়ান হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল যা আপনার জমির মালিকানা স্বত্ব প্রমাণ করে। এই দলিলটি আপনার জমি সম্পর্কিত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ধারণ করে, যার মধ্যে রয়েছে জমির পরিমাণ, অবস্থান, এবং মালিকের নাম। জমির খতিয়ান পাওয়ার প্রথম ধাপ হল জমি জরিপ। এই প্রক্রিয়ায় একজন পেশাদার সার্ভেয়ার আপনার জমির সীমানা নির্ধারণ করেন এবং এর আয়তন মাপেন। জরিপের পর, প্রতিটি জমি খণ্ডকে একটি বিশেষ দাগ নম্বর দেওয়া হয়, যা জমিটিকে সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
Author
Publisher Name
RBS Property BD
Publisher Logo

Join The Discussion

Compare listings

Compare
Open chat
Hello 👋
Can we help you?